রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২১ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৩ পিএম
রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বুধবার সকালে ফিরোজ চৌধুরীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো
এঁকেবেঁকে চলে গেছে গ্রামীণ মেঠোপথ। এক প্রান্তে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছেন একজন বৃদ্ধা। সূর্য প্রায় অস্তমিত। সুপারি গাছের শুকনো পাতায় বসে আছে দুই শিশু। তাদের পাতায় বসিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আরেকজন। শৈশবের নির্মল আনন্দে বিভোর তারা। কারও গায়ে কাপড় নেই, পায়ে জুতো নেই। খেলাধুলা আর আনন্দে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে তারা। এ যেন জসীমউদ্দীনের ‘পল্লী বর্ষা’ কবিতার ‘বাদলের জলে নাহিয়া এক মেয়ে, হেসে কুটি কুটি হয়’ পঙ্ক্তির মতো দৃশ্য। আরও আছে জীবনের সন্ধ্যা বেলায় বৃদ্ধার চিন্তামগ্ন থাকা কিংবা যৌবনে থাকা নারীর প্রাণবন্ত হাসি। জীবন-জীবিকা, শৈশব-কৈশোর, হাসি-আনন্দে মত্ত শিশুসহ বর্তমানের শহুরে জীবনে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের নানা স্মৃতি। এসবই ফুটে উঠেছে খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিরোজ চৌধুরীর আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ১৩তম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন ফিরোজ চৌধুরী। গতকাল বুধবার সকালে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র ফটোগ্রাফার এসএম গোর্কি, রংপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলীসহ অনেকে।
উদ্বোধনের পর থেকেই রংপুর নগরীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী প্রদর্শনীস্থলে ভিড় জমান। তারা ঘুরে ঘুরে গ্রাম-বাংলার নারী ও শিশুদের জীবন-জীবিকা, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য, শৈশবের দুরন্তপনার ছবির মাধ্যমে উপভোগ করেন। এসব ছবিতে তারা যেন জীবনের নানা রঙ দেখতে পান। এ সময় অনেকে ফিরে যান শৈশবের স্মৃতিতে। অনেকে মোবাইলের ক্যামেরায় পছন্দের ছবি তুলে সংরক্ষণ করেন।
রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিকা বলেন, প্রদর্শনীতে এসে গ্রামের শিশুদের নানা ধরনের খেলাধুলার দারুণ সব ছবি দেখতে পেলাম। এ ছাড়া গ্রামীণ নারীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ছবি রয়েছে। প্রদর্শনীতে শিশুদের খেলাধুলা, নদীতে একসঙ্গে লাফ দিয়ে গোসল করা, ঘোড়দৌড়, শাপলাফুল তোলাসহ বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর ছবি রয়েছে।
দর্শনার্থী নাহিদা ইয়াসমিন বলেন, টাউন হল এলাকা সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র। এখানে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হওয়ায় বিভিন্ন বয়সি ও পেশার মানুষ আলোকচিত্রগুলো দেখতে পারছে। তারা নিজ দেশের মানুষ সম্পর্কে জানতে পারছে। এ আয়োজন অনেক ভালো লেগেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র ফটোগ্রাফার এসএম গোর্কি বলেন, ১৯৮৮ সালে ফিরোজ চৌধুরী প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়। এটি তার ১৩তম আলোকচিত্র প্রদর্শনী। তার নিউজ ফটোগ্রাফি সেন্স বেশ দারুণ। যেসব ছবি প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে, সেসব কোনো ছবিরই ক্যাপশনের প্রয়োজন হয় না; কারণ ছবিই কথা বলে। তার ছবিতে দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। আমি তার সাফল্য কামনা করছি।
ফটো সাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা জীবনে আমি অনেক ছবি তুলেছি, যার সবগুলো পত্রিকায় ছাপা হয়নি। সেগুলোকে আমি মানুষের সামনে তুলে ধরতে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এ থেকে মানুষ বিনোদন পাবে এবং আমার ছবিগুলো দেখতে পারবে। প্রথম দিনই সবার দারুণ সাড়া পেয়েছি।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এ জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে এ ধরনের আয়োজন অনেক বেশি প্রয়োজন। এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষদের অংশগ্রহণ ও শ্রমের মাধ্যমে আগামীতে সৃষ্টিশীল নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে।
নারী ও শিশুবিষয়ক ১২৫টি আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীটি চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখতে পারবেন। প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে র্যাফেল ড্রর ব্যবস্থাও।