রিপন আকন্দ, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪০ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভিতরে প্রধান কারারক্ষীর সাথে এক নারী কয়েদির অন্তরঙ্গতা দেখে ফেলায় এক নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই নারী হাজতিকে দুইজন মিলে বিবস্ত্র করে স্পর্শকাতর স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি কামড়ে শরীর থেকে গোশত ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা গোপন রাখতে দেওয়া হচ্ছে জীবনণাশসহ সম্ভ্রমহানির হুমকি।
ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতির নাম মোর্শেদা খাতুন সীমা। তিনি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। সীমা প্রায় পাঁচ বছর ধরে মাদক মামলায় গাইবান্ধা হাজতে রয়েছেন। অসুস্থ ওই নারী হাজতির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার মা করিমন নেছা। সেই অভিযোগের একটি কপি এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে।
ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন। এছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন নারী কয়েদি রেহেনা ও আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা, সাবানা, সিআইডি সদস্য আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।
গত ১৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন ও প্রধান কারারক্ষী আশরাফুলের অন্তরঙ্গতা দেখে ফেলেন হাজতি সীমা। এতেই আশরাফুল ও মেঘলা ক্ষিপ্ত হন। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আশরাফুল সীমাকে জিম্মি করতে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করেছেন ও পরনের কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করেছেন একাধিকবার। অভিযোগ ওঠার পর আশরাফুলসহ তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে নেন। তারা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন বলেও অভিযোগ।
এসব অভিযোগ বিষয়ে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টির সাথে আমি জড়িত না। আমার নামটা কেন আসতেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাটি এক মাস আগের।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অপর মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সীমা একাধিক মামলার আসামি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামে এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন সীমা।’
এসব ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের সুপার জাভেদ মেহেদী বলেন, ‘গতকাল এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভিতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান ঘটনা তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। এর পরেই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’