চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৯ পিএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৯ পিএম
এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের চারপাশে এভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
এক মাস পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে নিরাপত্তা জোরদার করেছে মালিক কর্তৃপক্ষ। তবে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাহাজটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হতে পারেনি। বুধবার সকাল নাগাদ নিরাপদ এলাকায় পৌঁছনোর কথা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
১৪ এপ্রিল জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পর জাহাজটি সোমালিয়ান উপকূল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩৮৬ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়েছে জাহাজটি। ওই এলাকাটি অতিঝুঁকিপূর্ণ বলে পরিচিত। ওখান থেকে আরও ১২১ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দেওয়ার পর জাহাজটি ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় পৌঁছবে। এই ১২১ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার রাতে এমভি আব্দুল্লাহ অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হবে। বুধবার থেকে জাহাজটি নিরাপদ জোনে পৌঁছবে বলে আশা করছেন নাবিকরা।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করায় আবারও জলদস্যুদের কবলে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন নাবিকরা। এজন্য জাহাজটিতে লাগানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। জলদস্যুরা হামলা চালালে যাতে জলকামান ব্যবহার করা যায়, সেজন্য ডেকে ফায়ার হোস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাহাজে থাকা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় করার পাশাপাশি সোমালিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়া পর্যন্ত ওই রুটে সমুদ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ঝুঁকি মূল্যায়নকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিচ্ছে জাহাজটির মালিকপক্ষ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়া পর্যন্ত পথে কোনো ঝুঁকি থাকলে সেটি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জানিয়ে দেবে ওই প্রতিষ্ঠান।
জাহাজের সকল যন্ত্রপাতি সচল, রয়েছে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর এক ভিডিওবার্তায় জাহাজের সকল যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, তারা সবাই ভালো আছেন। জাহাজের মূল ইঞ্জিনসহ সকল যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে। জাহাজের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য তিনটি জেনারেটর রয়েছে। সব সচল আছে। যাত্রা শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি রয়েছে। জাহাজে পর্যাপ্ত খাবার ও সুপেয় পানি রয়েছে।
কোথায় নামবেন জাহাজের নাবিকরা
জাহাজের নাবিকরা কে কোথায় নামবেন, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নাবিকরা যে যেখানে খুশি নামতে পারবেন বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসাইন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা নাবিকদের জাহাজ থেকে নামার ক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করার যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা শিথিল করেছে। মালিকপক্ষ জানিয়েছ, নাবিকরা চাইলে দুবাই নামতে পারবেন। এখন পর্যন্ত মাত্র দুজন নাবিক দুবাই নামার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। বাকি ২১ জন জানিয়েছেন তারা জাহাজটি চট্টগ্রাম আসার পর নামবেন।’
এসআর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমও প্রতিদিনের বাংলাদেশকে একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুজন নাবিক দুবাইয়ে সাইন অফ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। বাকি ২১ জন জাহাজে করে বাংলাদেশে ফিরতে চান। তবে এক্ষেত্রে দুবাই থেকে যদি বাংলাদেশে ফিরতি পথে ট্রিপ পাওয়া না যায়, তাহলে জাহাজটি বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে নাকি অন্য দেশেও ট্রিপ পাওয়া গেলে সেখানে যাবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নাবিকদের চুক্তির মেয়াদের ক্ষেত্রে কোম্পানি ছাড় দিয়েছে। যদি বাংলাদেশমুখী ট্রিপ পাওয়া না যায়, তাহলে হয়তো সব নাবিককে দুবাইয়ে নামানো হবে। আরেক দল নাবিক জাহাজের দায়িত্ব নেবে।’
যেহেতু মালিকপক্ষ ছাড় দিয়েছে, নাবিকরা চাইলে সবাই দুবাই নেমে নিজ দায়িত্বে বাংলাদেশে ফিরতে পারেন। জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের ভাই আওরঙ্গজেব রাব্বি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা চাই আইয়ুব দুবাই থেকে সাইন অফ করুক। আইয়ুব নিজেও দুবাই থেকে সাইন অফ করার পক্ষে।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে যে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন তাদের সবাই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জাহাজে উঠেছেন। ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে তারা জাহাজে ওঠেন। নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজে ওঠার সময় একজন নাবিকের সঙ্গে জাহাজ কর্তৃপক্ষের চার মাস, ছয় মাস বা নয় মাস মেয়াদে চুক্তি হয়। চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করার পরই একজন নাবিক জাহাজ থেকে সাইন অফ করতে পারেন। তবে এমভি আব্দুল্লাহ কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। নাবিকরা চাইলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছনোর পর সাইন অফ করতে পারবেন। যদি না চান তাহলে তারা চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর সাইন অফ করবেন।