চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২১ পিএম
জিইসি মোড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের হামলায় আহত ডা. রিয়াজ উদ্দিন। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামে দুই দিনের ব্যবধানে দুজন চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে একটি ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তারা। অপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। চিকিৎসকদের ওপর পরপর এমন হামলার ঘটনা ও সেসব ঘটনায় প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা।
এসব হামলার ঘটনা চিকিৎসাক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে— এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সহকারী সার্জন ডা. আমীর খসরু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এসব হামলার কারণে ইমার্জেন্সি রোগীদের চিকিৎসা দিতে ভয় পাবে ডাক্তাররা। রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে এসব ঘটনা।’
জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলোর সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা দরকার। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন আরও জোড়ালো করা দরকার। হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাও জরুরি।’
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার রাতে সভা ডেকেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখা। দুই দিন আগে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থান থেকে সরে আসে সংগঠনটি।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পরপর দুটা হামলার ঘটনা ঘটল চিকিৎসকদের ওপর। এ বিষয়ে কর্মসূচি ঠিক করতে মঙ্গলবার রাতে বিএমএর সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে। বুধ বা বৃহস্পতিবার আমরা কর্মসূচি দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পটিয়ায় ঈদের আগের রাতে একটা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর দুই দিন পর চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালেও হামলা হলো। চট্টগ্রামের ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ কারণে আমরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। তবে তাদের সবাইকে বিশেষ বিবেচনায় জামিন দিয়েছেন আদালত। পটিয়ার মামলায় তো কাউকে গ্রেপ্তারই করা হয়নি। যাদের জামিন দেওয়া হয়েছে তাদের জামিন বাতিল ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা কর্মসূচি করব।’
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক আওয়ামী লীগ নেতাকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগে এই হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় পরদিন উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছৈয়দসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা হয় পটিয়া থানায়। তবে এখনও আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পটিয়ার ঘটনার পর ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বরত চিকিৎসককে মারধর করে রোগীর স্বজনেরা। শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক বছরের ওই শিশুকে রাতে পিআইসিইউতে রাখার পর সকালে তাকে এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। রবিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
বেলা ১১টার দিকে শিশুটির বাবা লোকজন নিয়ে এনআইসিইউর সামনে চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে আহত অবস্থায় ডা. রিয়াজ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় শিশুটির বাবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
এ বিষয়ে ডা. ফয়সাল ইকবাল বলেন, ‘এ ঘটনায় মূল আসামিসহ এ পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছে। পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের ঘটনায় পটিয়া থানার ওসির ভূমিকা রহস্যজনক। মূল আসামি দক্ষিণ ভূষীর সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ সেখানকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে নববর্ষের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন; যেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।’
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।’
প্রধান আসামির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন সংসদ সদস্যের সঙ্গে নববর্ষের অনুষ্ঠানে ছৈয়দ আছেন শুনেই ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। তার আগেই সে পালিয়ে গেছে। আশা করছি, আসামিরা শিগগিরই ধরা পড়বে।’