নুপা আলম, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১৩ পিএম
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৭ পিএম
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ, দুইয়ে মিলে লম্বা ছুটি। টানা এই ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভিড় করছে লাখও পর্যটক। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে তারা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লোনা জলের হাওয়া মেতেছে নিজের মতো। কেউ জলের ঢেউয়ে শরীর ভাসিয়ে উপভোগ করছে সাগরের আবহ। আর কেউ বা সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরে ফিরে প্রকাশ করছে উচ্ছ্বাস।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, জেলায় এখন তপ্ত রোদের আবহ। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। সেই তপ্ত রোদের দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্ট ঘুরে দেখা মিলেছে পর্যটকের উপচে পড়া ঢল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকের সঙ্গে মিশে গেছে জেলার স্থানীয় লোকজনও। তারা দল বেঁধে ছুটে এসেছেন সমুদ্রজলের নীলদিগন্ত ছুঁয়ে দেখতে।
পর্যটকদের কেউ কেউ ঘোড়া, জেটস্কি ও বিচ বাইকে চড়ে বিনোদনে মেতেছে। আবার কেউ কেউ বিস্তৃত সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছে ছবি। এতে সৈকতের কবিতা চত্বর থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।
আগত পর্যটকরা বলছে, ঈদের আনন্দ একটু ভিন্নভাবে উপভোগ করতে তারা সমুদ্রের অপার সৌন্দর্যের টানে কক্সবাজার ছুটে এসেছে। এখানে তপ্ত রোদের চেয়ে সমুদ্র লোনা জলের শীতল পরশ ও হাওয়ায় বিমুগ্ধ তারা।
রাজশাহীর কলেজ শিক্ষক আনোয়ারুল আজিম এসেছেন স্বপরিবারে। পরিবারের ৫ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালে পৌঁছেছেন কক্সবাজারে। আবাসিক হোটেল কক্ষে প্রয়োজনীয় কাপড়-ব্যাগ রেখেই ছুটে এসেছেন সৈকতে। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত ছুটি পেয়েছি। এই ছুটি স্মৃতিময় করতেই কক্সবাজারে ভ্রমণ। একটু গরম, কিন্তু সাগরের হাওয়ায় যেন মিশে গেছে রোদের তীব্রতা। সাগরের জল শরীরকে করেছে অন্যরকম শীতল।
ঢাকা থেকে এসেছে ২২ তরুণ। সৈকতের বালিতে খালি পায়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় তাদের। এই তরুণদের একজন মাহমুদ রফিক। তিনি বলেন, রোদে বালি একটু গরম। এই গরম পায়ে উপভোগ কেমন জানতেই তাদের এমন প্রতিযোগিতা।
গরমটা কেমন এমন এক প্রশ্নের উত্তরের তাদের আরেক বন্ধু রোকন জানান, একটু আগে সাগরের জলে পা ভিসিয়ে এসেছি। প্রথম বার গরম মনে হলেও এখন তা মনে হচ্ছে না।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বন্ধুদের এই ভ্রমণ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে ছবি-অনুভূতি প্রকাশ করার প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে তারা খালি পায়ে বালিতে হাঁটার এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বলে মন্তব্য করেন আরেক বন্ধু আতিকুল।
ছুটিতে কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের দেখা পেয়ে খুশি ব্যবসায়ীরাও।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, রমজানের পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটায় তারা খুশি। শুক্রবার কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেলের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই বুকিং হয়েছে। পর্যটক আরও বাড়ছে। যেহেতু টানা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের একটু বাড়তি চাপ থাকে, তাই হোটেল কক্ষের বুকিংসহ দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘবে আগাম তথ্য জেনে ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের মক্কা স্টোরের ম্যানেজার মো. ইমরান বলেন, পর্যটক এলে মন ভালো হয়ে যায়। রামজানের খরা গেছে। রঙ করার পর নানা প্রকারের চকোলেট ও বার্মিজ আচার আনা হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা জানান, কোন পর্যটক যাতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হন সেজন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। আর টানা ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলম বলেন, ঈদের ছুটিতে লাখও পর্যটকের সমাগম হওয়া শুরু করেছে। এর জন্য আগেভাগেই সব পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সব প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে। আগত পর্যটকদের জন্য ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে রয়েছে। জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।