ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫১ এএম
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ফেনীর নাবিক বিপ্লবের পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ। প্রবা ফটো
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে জিম্মি ফেনীর নাবিক ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ বিপ্লবের পরিবারে নেই ঈদের আমেজ। ঈদকে সামনে রেখে তাদের পরিবারে হচ্ছে না কোনো ধরনের কেনাকাটা। নেই ভালো কিছু রান্নার প্রস্তুতিও।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, অপহৃত নাবিকদের স্বজনদের সঙ্গে। অন্যবারের ঈদগুলো খুশির থাকলেও এবার ঈদ তাদের কাছে নীরব কান্নার। একইসঙ্গে বয়ে বেড়াচ্ছে শঙ্কা ও প্রতীক্ষা। পরিবারের উপার্জনশীল প্রিয় ব্যক্তিদের বন্দিদশায় মহাসাগরে তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ নাবিকের মুক্তির আকুতি স্বজনদের।
ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ বিপ্লব এর বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূ ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামে। পরিবার ফেনী শহরে নাজির রোডে বাসা ভাড়া করে থাকেন। বর্তমানে তার সহধর্মিনী উম্মে সালমা তার শশুর বাড়ি ফেনী সদর উপজেলা ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিসপুর গ্রামে আছেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সবার মাঝে উৎকন্ঠা। আবুল হোসেনের ভূইয়ার ৪ ছেলে, ২ মেয়ের মধো বিপ্লব সবার বড়। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। ৮ বছর আগে জাহাজের চাকরিতে যান ইব্রাহিম। গত ৪ মাস আগে বাড়ীতে এসে একমাস অবস্থান করে আবারো জাহাজে চলে যান। ইব্রাহিম ওই জাহাজে ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত আছেন। বিপ্লব ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছিলেন। তার দুই ছেলে রয়েছে রেদওয়ান বিন ইব্রাহিম ও রিহান বিন ইব্রাহিম।
বড় ছেলে রেদোয়ান বিন ইব্রাহীম জানান, তার সাথে সর্বশেষ কথায় দুষ্টামি না করে মায়ের কথামত চলতে বলেছে। বাড়িতে আসার সময় তার জন্য কিছু জিনিস নিয়ে আসবে বলেছে তার বাবা।
স্ত্রীর খালাতো ভাই নজরুল ইসলাম জানান, মেরিন সোসাইটি, বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের যৌথ তৎপরতায় জাহাজটিকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছি।
বিপ্লবের শশুর ইব্রাহীম খলিল বলেন, তার বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। এরপর গত ২০ দিন ছেলের বন্দিদশায় বদলে গেছে পরিবারের চিত্র। ঈদের আগেই যেন সকল নাবিকের মুক্তির ব্যবস্থা করে সরকার।
মা রৌশনারা বলেন, আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনে। ছেলে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ আনন্দ নেই।
স্থানীয়রা বলেন, অপহৃত নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি নাবিকদের পরিবারে। ছেলের স্মৃতিচারণ করে এখন বাবা-মা শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পালা করে চলছে শোকের মাতম।তবে সবার প্রত্যাশা এমন উৎকণ্ঠার সময় পেরিয়ে ফিরে আসুক তাদের স্বজন।
বিপ্লবের সহধর্মিণী উম্মে সালমা সোনিয়া জানান, এখন নিজেরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করছি এই ভেবে যে এখনো সময় আছে স্বামী ফিরবে। সরকার ২৩ জন নাবিককে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। তার সাথে সর্বশেষ কথায় দুই ছেলেকে দেখে রাখতে বলেছেন বিপ্লব। দোয়া করতে বলেছেন।
গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১২ মার্চ দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীটির কর্তৃপক্ষ।