× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাসচালক ও হেলপারের মৃত্যু

যাত্রীদের মারধরে নয় বাসচাপায় মৃত্যু, নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যা বলেন হেলপার

সাভার ও ধামরাই (ঢাকা) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২০ পিএম

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৩৮ পিএম

সাভারে বাসচালক ও হেলপারের মৃত্যুর ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ। সংগৃহীত

সাভারে বাসচালক ও হেলপারের মৃত্যুর ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ। সংগৃহীত

সাভারে ‘যাত্রীদের মারধরে’ আহত হয়ে ইতিহাস পরিবহনের চালক ও হেলাপর (সহকারী) নিহতের ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি করে। তবে তদন্ত বেরিয়ে আসে অন্য ঘটনা। নিজেকে বাঁচাতে নাটক সাজিয়েছিলেন ইতিহাস পরিবহনের হেলপার পরিচয় দেওয়া আব্দুর রহমান। এমন তথ্যই জানিয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী। এর আগে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে আহত চালক ও সহকারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা মারা যান।

তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পুলিশ মাঠে নামে। পুলিশ জানায়, মূলত আব্দুর রহমান ইতিহাস পরিবহনের বাসটি চালাচ্ছিলেন। নিহতের একজন ছিলেন গাড়ির দরজা সোজা সড়কে, অপরজন ছিলেন গাড়ির দরজায়। আব্দুর রহমান দুই অপর বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বাস বামে চাপান। এ সময় সোহেল ও হৃদয় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়েন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময় আব্দুর রহমান বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। পরে ফিরে এসে পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই গাড়ির হেলপার।তিনি মঙ্গলবার বলেন, মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা ইতিহাস পরিবহনের চালক ও হেলপার। তারা ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া চান যাত্রীদের কাছে। প্রায় সব যাত্রীরাই বেশি ভাড়া দেয়। তবে একজন বেশি ভাড়া দিতে রাজি হননি। এই বেশি ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে যাত্রিদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ওই যাত্রী ফোন করে তার সহযোগীদের খবর দেন। পরে ১০ জন গাড়িতে উঠে চালক ও হেলপারকে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।

আশুলিয়া থানা-পুলিশ জানায়, প্রাথমিক সুরতহালে ১০ থেকে ১২ জন মিলে মারধরের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। একজনের পিঠে একটি আঘাতে চিহ্ন ও অপরজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে হেলপার পরিচয় দেওয়া ওই চালক আব্দুর রহমানকে খুঁজে বের করে পুলিশ। যিনি মঙ্গলবার হেলপার পরিচয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন। মূলত নিজেকে বাঁচাতে তিনি মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিলেন।

পুলিশের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, ডিইপিজেডের সামনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। চলছিল ধীরগতিতে। একটি ইতিহাস পরিবহনের বাস সড়কে চন্দ্রামুখী লেনের ডান পাশ ঘেঁষে থামে। কিছুক্ষণ পর পাশ দিয়ে বাবা-মায়ের দোয়া নামে একটি বাস চলে যায়। এর পরপরই ইতিহাস পরিবহনের বাসের গেটে লোকজনের জটলা দেখা যায়। এক পুলিশ সদস্যকে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা সুমন শেখ বলেন, ‘ওই সময় ইতিহাস গাড়ির দুজন রাস্তায় মারামারি করছিল। তখনই উত্তরবঙ্গের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। পুলিশ তাদের অটোতে উঠিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। আর ভেতরে যে একজন ছিলেন, তিনি পালিয়ে যান।’

মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়া থানায় কথা হয় আব্দু্র রহমানের সঙ্গে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ভাড়া নিয়ে এক যাত্রীর সঙ্গে হৃদয়ের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে চালক আমাকে কিছুক্ষণের জন্য তার আসনে বসিয়ে বাস থেকে নামে। ওই সময় সেখানে ওই যাত্রীর পরিচিত আরও তিন-চারজন ছিলেন। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। 

ঘটনার সময় কেন সহযোগিতা না করে দূরে সরে গিয়েছিলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভয় পেয়েছিলাম। তাই দ্রুত নেমে গিয়ে সামনের দিকে চলে যাই, পুলিশ খুঁজতে।

এর আগে তিনি বেশি ভাড়া দাবি করায় এক যুবক ও তার পরিচিতরা হৃদয় ও সোহেল রানা বাবুকে মারধর করেছে বলে বক্তব্য দেন। তখন কেন এমন বক্তব্য দিলেন জানতে চাইলে আব্দু্র রহমান বলেন, ওই সময় আমি চাপের মধ্যে ছিলাম। হৃদয়ের আত্মীয়-স্বজনরাও বারবার জিজ্ঞেস করছিল, তাই এটি বলেছিলাম। আমি ধারণা করছি, চালক ও হৃদয় বাস থেকে নামার পর উত্তরবঙ্গের একটি বাস পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের চাপা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আনেন। সাংবাদিকদের কাছে যে বক্তব্য বা পুলিশ অফিসারের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন আব্দুর রহমান, তাতে আমাদের খানিকটা সন্দেহ হয়। কেননা তার বক্তব্য অনুযায়ী ১০/১২ কিংবা ১৫ জন ব্যক্তি মিলে বাস থেকে নামিয়ে দুজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। কিন্তু প্রাথমিক সুরতহালে এমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার বক্তব্যের সঙ্গে আঘাতের চিহ্নের কোনো মিল নেই। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করি আমরা।

তিনি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই। যিনি আমাদের জানান, এখানে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে সোহেল ও হৃদয় আহত হন। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র‌্যাকার কর্মকর্তা ওই বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্যেও সেখানে মারামারি হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাইনি। পরবর্তীতে বুধবার (১০ এপ্রিল) ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থাৎ যিনি বাসের হেলপার পরিচয় দিয়ে এই ঘটনাগুলি বলেছিলেন, তার সঙ্গে আবারও আমরা কথা বলি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি প্রাথমিকভাবে এরকম বলেন যে, আসলে স্টিয়ারিংয়ে তিনি নিজেই ছিলেন। ওই সময় তিনি নিজেই ইতিহাস পরিবহনের বাস চালাচ্ছিলেন। মা-বাবার দোয়া নামের অন্য একটি পরিবহন তাদের বাম পাশে ছিল। মা-বাবার দোয়া বাসটি যখন আগে যাচ্ছিল, তখন আব্দুর রহমান নিজে আগে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করে গাড়ি বামে চাপান। হতাহত দুজনের একজন রাস্তায় ছিলেন, আরেকজন বাসের গেটের দিকে ছিলেন। বাসটি যখন জরুরি ভিত্তিতে বামে চাপাতে যায়, তখন ওই দুজন বামে থাকা মা- বাবার দোয়া পরিবহনের সঙ্গে চাপা খান। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে তদন্তে আমরা এতটুকু পেয়েছি। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্ত করে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব; আসলে সেদিন কী ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে আব্দুর রহমান মঙ্গলবার যা বলেছেন, তার সঙ্গে বুধবারের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। ঘটনা ঘটার পর বাস থেকে লাফিয়ে তিনি পালিয়ে যান। তার পরনে কালো শার্ট ছিল। এটি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য। তবে আজ তার বক্তব্যে উঠে এসেছেÑ তিনি মামলা, শাস্তি কিংবা জেলের ভয়ে গতকাল নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, তার যে দুজন সঙ্গী ছিলেন, দুজনই মারা গেছেন। আর এতো ব্যস্ত সড়কে হয়তো বিষয়টি কেউ খেয়াল করবে না। বোধ হয় এভাবে বললে এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে। এটি প্রাথমিকভাবে তিনি স্বীকার করেছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা