× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড়ে সংঘাত

উৎসবের সময় ফের নিষ্প্রাণ পাহাড়

এস এম রানা, চট্টগ্রাম ও সুফল চাকমা, বান্দরবান

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৩৩ পিএম

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০১:২৬ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কথা ছিল ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে আগামী ২২ এপ্রিল পুনরায় বৈঠকে বসবে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সেই বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত সাতটি শর্ত মেনে চলবে উভয়পক্ষ। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত আলোচনার ২০ দিন আগে উৎসব-আনন্দ আয়োজনে জল ঢেলে নিষ্প্রাণ করে সবকিছুই যেন ভণ্ডুল করে ফেলেছে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন (কেএনএফ)। কেননা মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদকে ঘিরে পাহাড়ে রমরমা ব্যবসা হয় পর্যটন শিল্পের। আবার ঈদের পরপরই জমে ওঠে পাহাড়ে মারমা-রাখাইনদের সাংগ্রাই ও বাঙালির বৈশাখী উৎসব। সবাই যখন এসব উৎসবে মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের ব্যাংক লুট, অপহরণ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় বান্দরবানে নেমে এসেছে অশান্তির কালো ছায়া।

উৎসবের সময়েও পর্যটকশূন্য পাহাড় 

গত বছরও দীর্ঘ সময় কেএনএফের অস্ত্রবাজির কারণে পাহাড়ে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল। তখন পর্যটন শিল্পে ধস নামে। এ বছরও একই কারণে এ শিল্পে ধস নামতে চলেছে। ঈদ, সাংগ্রাই ও বৈশাখী উৎসব সামনে রেখে বান্দরবানের হোটেল-মোটেলে যে পর্যটকরা কক্ষ বুকিং করেছিলেন, তাদের অনেকেই তা বাতিল করেছেন। 

বান্দরবান হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ঈদ-সাংগ্রাই উৎসবের সময় বান্দরবানে আসতে চেয়েছিলেন, এমন পর্যটকদের অনেকেই তাদের বুকিং বাতিল করছেন। তবে আশা করছি, বান্দরবান সদর এবং মেঘলাকেন্দ্রিক কিছু এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা হতে পারে। সব মিলিয়ে পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। এতে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। 

ঈদের লম্বা ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে বান্দরবান বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল ঢাকার ব্যবসায়ী মুস্তফা বিন হারুনের। তিনি বান্দরবান সদরের একটি হোটেলে চারটি কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বললেন, ‘বান্দরবান যাব বলে হোটেলে কক্ষ বুকিং দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানলাম, সেখানে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ব্যাংক লুট করেছে, অপহরণ করেছে, তখনই বুঝতে পারলাম বান্দরবান আর যাওয়া হবে না। তাই গত শনিবার হোটেলের কক্ষ বরাদ্দ বাতিল করেছি। ঝুঁকি নিয়ে ওদিকে যাব না।’ 

থানচি ও রুমার দিকে পর্যটকদের উপস্থিতি কম হলেও বান্দরবান সদর এবং মেঘলা ঘিরে কিছু পর্যটক যেতে পারেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শেষ পর্যন্ত কতজন যাবেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। কেউ গেলেও দিনে দিনেই বান্দরবান ছেড়ে আসবেন, ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রস্তুতি

উৎসবকেন্দ্রিক পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রস্তুতি কেমন?Ñ জবাবে বান্দরবান জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোরশেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঈদ, পহেলা বৈশাখ, সাংগ্রাইÑ সব মিলিয়ে উৎসব আমেজ রয়েছে। এই সময় বান্দরবানে অনেক ট্যুরিস্ট বেড়াতে আসেন। তাদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’ 

দাবিগুলোর প্রতি সরকার মনোযোগ দিক : কেএনএফ

ঈদ, সাংগ্রাই, বৈশাবী- এমন সব উৎসবের আগে আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেএনএফ কেন সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করল?Ñ জবাবে কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক লালজংময় বলেছেন, ‘কেএনএফ কোনো উৎসব মাথায় রেখে কাজ করে না।’ 

‘তাহলে কেএনএফ কি দেশের মানুষের উৎসব ও অর্থনীতির চাকা বন্ধ করে দিতে চায়?’- লালজংময় বলেন, ‘অবশ্যই না। আমাদের দাবিগুলো অবহেলা করে বড় শিল্প বানিয়ে লাভ কী? আমরা যারা সংখ্যালঘু, সব জায়গায় আমরা ধাক্কা খাই, সেটা সরকার থেকেও। আবার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল থেকেও।’ আলোচনার পথ বন্ধ করে কেএনএফ নিজেদের মতো করে সবকিছু পর্যালোচনা করলেই কি শান্তি ফিরবে? নাকি শান্তি আলোচনায় ফিরতে হবে? - এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেএনএফ মনে করে, আলোচনার মাধ্যমেই শান্তি ফেরাতে হবে। তাই কেএনএফ প্রত্যাশা করে, দাবিগুলোর প্রতি সরকার মনোযোগ দেবে এবং কেএনএফকে বঞ্চনামুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।’

রুমা-থানচিতে সন্ত্রাস দমনে সাঁজোয়া যান

বান্দরবানের থানচিতে কেএনএফের সক্রিয় তিনজন সদস্যকে যৌথবাহিনী আটক করেছে। এ সময় ব্যাংক ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির এক ড্রাইভারকেও আটক করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে থানচি ও রুমায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। 

এদিকে রুমা-থানচি উপজেলায় কেএনএফের লাগাতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে ও চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত রবিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে চারটি সাঁজোয়া যান (এপিসি)। যা দিয়ে এ দুই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল দেবেন বাহিনীর সদস্য।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, গত রবিবার গভীর রাতে থানচিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে কেএনএফের তিন সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ সময় থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সঙ্গে একজন ড্রাইভারকেও আটক করা হয়।  

তিনি বলেন, ‘উপজেলাগুলোতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে চারটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) আনা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়ানো হবে।’

রুমা বাস মালিক সমিতির লাইনম্যান জাকির হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকে গণপরিবহনসহ অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার যান চলাচল রুমায় বন্ধ। রুমা বাজার এখন জনশূন্য। এই ঘটনায় থানচিতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপম জানান, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া বাজার ব্রিজ এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বস্তা বসিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।

যৌথ অভিযানে ৫৫ জন আটক

রুমায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে এ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রুমার পাহাড়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭ এবং নারী ১৮ জন।

এছাড়া অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ৭টি দেশি বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, কেএনএফের পোশাক, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুই জোড়া বুট, ১টি ছুরি ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, রুমা-থানচিতে কেএনএফের তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা-থানচিতে ৮টি মামলা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে সেনাবাহিনী-র‍্যাব-পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়। 

এদিকে কেএনএফের তাণ্ডবের ঘটনায় বান্দরবানজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপরদিকে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় ব্যাংক বন্ধ থাকায় বান্দরবান জেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গ্রাহকের ভিড় বেড়েছে। বেড়েছে ভোগান্তি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা