কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৯ পিএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৭ পিএম
সোমবার সকালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকার চিত্র। প্রবা ফটো
ঈদ ঘিরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষদের সেই আমেজ আর নেই। লঞ্চের স্টাফদের লাগামহীন হাঁকডাক থাকলেও যাত্রীর চাপ অন্যান্য ঈদের সময়ের তুলনায় অনেকটায় কম। টিকিট বিক্রেতারাসহ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা এমনটিই জানিয়েছেন। এদিকে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও খুব বেশি ভিড় না থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন বলে জানান লঞ্চ যাত্রীরা।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে খুব বেশি যাত্রী না থাকলেও গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। এদিকে প্রত্যাশিত যাত্রী না হওয়ার কারণ কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করেছে মালিকপক্ষ। এবার ঢাকা- তুষখালী, ঢাকা-রায়েন্দাসহ বেশ কয়েকটি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে যা গত বছর চলেছিল।
সোমবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, টার্মিনালে তেমন একটা ভিড় নেই। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। শুধুমাত্র চাঁদপুর রুটের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া রুটগুলোতেও কিছুটা ভিড় ছিল।
যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা সেতুর চালুর পর লঞ্চ মালিকদের দাপট অনেকটাই কমে গেছে। এখন আর বাড়তি ভাড়া চাওয়া হয় না। অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হয় না। টাকা কম লাগে। আর জার্নি খুব আরামদায়ক বলেই লঞ্চে ভরসা তাদের। তবে ক্ষতির কথা বললেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যাত্রী সংকটে কয়েকটি লঞ্চ রুট প্রায় বন্ধের পথে। ঈদের আগেও যাত্রীর চাপ নেই।
বরিশালগামী তানজিল আহমেদ বলেন, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাচ্ছি। বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ একটু কষ্টকর। তাই, লঞ্চে যাচ্ছি। তবে, আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করে। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা তিন ঘণ্টায় বাড়িতে যেতে পারি।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মামুনুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত কেবিনের কোনো চাপ দেখা যাচ্ছে না। তবে পরে হয় কি না তা আমরা এখনও জানি না। গতবারের যে চাপটা ছিল এখন আর ওই চাপটা নেই। এখন টিকিট বিক্রি আগের তুলনায় কম হচ্ছে।
এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের স্টাফ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের আগে ৭ এপ্রিল ট্রিপ আছে। এখনও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট ছাড়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। টিকিট পেতে হলে যাত্রীদের ট্রিপের দুই দিন আগে এসে খোঁজ নিতে হবে।
এমভি শাহরুখ-২ লঞ্চের পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একে তো তেলের দাম বাড়তি, আবার পদ্মা সেতুর চাপ তো আছেই। আমরা ক্ষতিতে আছি। লাভের মুখ না দেখেই বিভিন্ন রুটে আমাদের লঞ্চ চলছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঘাটে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই, যা আছে তা আশানুরূপ নয়। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে। বলা চলে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আগের মতো তেমন চাপ নেই। আশাকরি যাত্রী বাড়বে সামনে। ঘাটে বিশেষ লঞ্চ দেওয়া আছে। যাত্রী বেশি হলে চলবে না হলে চলবে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন (যাপা) সহসভাপতি বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, যাত্রী একেবারেই কম। লঞ্চ ডেক বেশিরভাগ খালি যাচ্ছে। বড় বড় লঞ্চগুলোর আরও বিপদ। লঞ্চের ব্যবসা শেষ। তেলের দামই উঠছে না। লস নিয়ে গেলে ফিরে আসা দায়।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবুল কালাম বলেন, বিগত সময়গুলোর তুলনায় ঘাটে যাত্রীর চাপ অনেক কম। তবে এ ভিড় গত কয়েক দিনের থেকে সামান্য বেড়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ আনসার সদস্যরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। আমাদের নৌপুলিশ ঘাটে ও লঞ্চে উভয় স্থানে কাজ করছে।