× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাণিজ্যিকীকরণ প্রশ্নে বিরূপ প্রতিক্রিয়া

রিকোর্স চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৩ পিএম

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম

রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসক বাংলোর সামনের পার্ক। উন্মুক্ত পার্কটি সম্প্রতি বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রবা ফটো

রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসক বাংলোর সামনের পার্ক। উন্মুক্ত পার্কটি সম্প্রতি বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রবা ফটো

কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ে ঘেরা পর্যটন শহর রাঙামাটি। বিশালাকার জলাধারের কাপ্তাই হ্রদ একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, আবার হ্রদই এ রাঙামাটিকে দুর্গম করেছে। রাঙামাটির পর্যটনশিল্পে আমূল পরিবর্তন না হলেও বিগত এক দশকে গড়ে উঠেছে ছোটবড় বাণিজ্যিক পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র। হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙামাটির বাণিজ্যিক আয়োজনের বাইরে উন্মুক্ত রয়েছে শহরের ডিসি বাংলো পার্ক। প্রশাসন সেটি নিয়েও বাণিজ্যিকীকরণের দিকে হাঁটছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তাদের দাবি পার্কটি উন্মুক্ত রাখা হোক। 

স্থানীয়রা বলছেন, একে একে সব উন্মুক্ত স্থানে পার্ক ও বাণিজ্যিকভাবে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় উন্মুক্ত বিনোদনের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। শহরের শেষ প্রান্তে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বাংলোর সামনের পার্কটি পুরো শহরের মানুষের চিত্তবিনোদন, খোলামেলা পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো ও কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উন্মুক্ত স্থান। আশেপাশের বাসিন্দারাও পরিবারের সদস্যসহ শিশুদের নিয়ে বিকালের অবসর সময় কাটাতে আসে এখানে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের সামনে যেখানে গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিং করা হতো সেখানে প্রবেশ বুথ তৈরি করা হয়েছে। বুথের দেয়ালে নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা, পার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় দর্শনার্থীদের যাতায়াত সাময়িক বন্ধ। তবে পার্কের ভেতরেও বেশ কিছু দর্শনার্থীকে দেখা গেছে। সেখানে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, আগামীতে পার্কে ঢুকতে টিকিট লাগবে, সেজন্য তারা আপাতত কিছুদিন টিকিট ছাড়াই অবস্থানের সুযোগ পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরে পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, শিশুপার্ক, আরণ্যক, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বার্গী লেকভ্যালি, রাঙাদ্বীপ, বরগাঙ এবং কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া রিভারভিউ পার্ক, লেকশোর, লেকভিউ, প্রশান্তি পার্কসহ একাধিক পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে। এসব বিনোকেন্দ্র ও পার্ক বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও প্রবেশ করতে হয় প্রবেশমূল্য দিয়ে। এর মধ্যে পর্যটন ঝুলন্ত সেতু পার্কে ২০ টাকা, পলওয়েল পার্কে ৪০ টাকা, শিশুপার্কে ২০ টাকা, আরণ্যকে ৪০ টাকা, বার্গী লেকভ্যালিতে ২০ টাকা, বরগাঙে ২০ টাকা, রাঙাদ্বীপে ৫০ টাকা, কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গাছড়া রিভারভিউ পার্কে ২০ টাকা, লেকভিউতে ২০ টাকা ও লেকশোরে ২০ টাকা, প্রশান্তি পার্কে ১০ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হচ্ছে। 

শুধু ডিসি বাংলো পার্কটিই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। সম্প্রতি সেই পার্কটির সংস্কার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসি বাংলো পার্কের প্রধান তোরণ নির্মাণ, পার্কের নিচের অংশে দেয়াল, বসার স্থান, শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলনা, রাইড ও ব্যাঙের ছাতাসহ অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

শহরের বাসিন্দা ও উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা বলেন, ‘ডিসি বাংলো এলাকাটি কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী পার্ক। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যবাহী এলাকা। শুরু থেকে উন্মুক্ত ছিল এবং এটি উন্মুক্তই থাকুক এটাই প্রত্যাশা। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে টিকিটের আওতায় আনলে জনসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হবে।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) জেলা সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ আর উন্মুক্ত জায়গা নেই বললেই চলে। ডিসি বাংলো পার্ক রাঙামাটির একটি ঐতিহাসিক স্থান। সেখানে শত বছরের প্রাচীন চাপালিশ গাছও রয়েছে। রাঙামাটিতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষের ক্লান্তি ও অবসাদ দূরীকরণের জন্য উন্মুক্ত স্থান এটি। আমাদের দাবি পার্কটিতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসা হোক।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার বলেন, ‘শিশু কিশোর ও সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। যেভাবে বাণিজ্যিকভাবে সবকিছু গড়ে তোলা হচ্ছে একমাত্র ডিসি বাংলো পার্কটি ছাড়া জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কিছু নেই। সম্প্রতি এটিকে টিকিট দিয়ে প্রবেশের যে আয়োজনের কথা শুনছি, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পার্ক সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন, অন্যথায় শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার ওপর প্রভাব পড়বে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ডিসি বাংলো পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হচ্ছে। টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশ মূল্য দিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের বিষয়ে ভাবছে জেলা প্রশাসন। তবে জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে শহরের একমাত্র উন্মুক্ত পার্কে টিকিট দিয়ে প্রবেশ করা কিংবা উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘সন্ধ্যায় পার্কে মাদকসেবনসহ অসামাজিক কাজ হতো। পার্কের পরিবেশ ঠিক করে সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা কাজ করছি। এখনও টাকা-পয়সা বা টিকিট করব কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা চিন্তাভাবনা করতেছি, তবে এটা ফাইনাল না। টিকিট আমরা নাও করতে পারি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা