অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৬ পিএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৯ পিএম
রাঙামাটির কাপ্তাই-ঘাঘড়া সড়কের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ে উৎপাদিত সজনে ডাঁটা পণ্যবাহী ট্রাকে প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেক চাষি। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা হেডম্যানপাড়া। সড়ক দিয়ে যেতে যেতেই চোখে পড়ল, সে গ্রামের একজন সজনে ডাঁটা বস্তায় ভরছেন। কথায় কথায় জানা গেল, তার নাম সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যা। নিজের দুর্গম পাহাড়ি বাগান থেকে তিনি নিয়ে এসেছেন এসব সজনে ডাঁটা। বস্তায় ভরার পর পণ্যবাহী ট্রাকে করে সেগুলো পাঠানো হবে ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে রাঙামাটির কাপ্তাই-ঘাঘড়া সড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, পাহাড়ে উৎপাদিত সজনে ডাঁটা কেজি হিসেবে ভাগ করে প্যাকেটজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যার মতো অনেক চাষি। কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এলাকার তম্বপাড়া, সাফছড়িসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার সজনে ডাঁটা চাষি স্বপ্না মারমা, রেবতি তনচংগা, চাচিং মারমাসহ অনেক চাষিই জানালেন, তাদের এখন নিঃশ্বাস নেওয়ারও সময় নেই। কারণ স্থানীয় বাজার পেরিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এই সজনে ডাঁটার চাহিদা অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া সজনে ডাঁটার বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণের কথা প্রচার পাওয়ায় অনেক মানুষই এখন এটি আরও বেশি ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আর হজমের সমস্যায় এই ডাঁটা বেশ কার্যকর বলে অনেকের ধারণা।
ওয়াগ্গা এলাকার সফল সজনে ডাঁটা চাষি সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যা আরও জানান, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সহজেই সজনে ডাঁটার বাম্পার ফলন ঘটে থাকে। তা ছাড়া এর বাজার দরও ভালো। ইতোমধ্যে অনেকেই সজনে ডাঁটা চাষ করে তা বিক্রির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে তিনি জানান। অনেকে এটি বিক্রি করে এক ঋতুতে লাখ টাকার বেশি আয় করছেন।
আরেক সজনে চাষি চাচিং মারমা জানান, প্রতি কেজি সজনে ডাঁটা তারা আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ক্রেতারা এসে ট্রাক বোঝাই করে এসব ডাঁটা কিনে নিয়ে যান।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইমরান আহমেদ জানান, সজনে ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে মাত্র একবারই ফলন দেয়। তবে পাহাড়ে স্থানীয়ভাবে আরও একটি প্রজাতির সজনে রয়েছে। যেটির নাম বারোমাসি সজনে। এটি থেকে বছরে তিন-চারবার ফলন পাওয়া যায়।
কৃষি অফিসার ইমরান আহমেদ জানান, যেকোনো পতিত জমি7তে সজনের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই তা থেকে গাছ জন্মায়। তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজনও পড়ে না। তবে বর্তমান সময়ে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করেও এটি জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। বড় ও মাঝারি ধরনের একটি গাছে তিন থেকে চার মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। তা ছাড়া আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হয়ে থাকে এই সজনে ডাঁটার। তা ছাড়া এর ডাঁটা ও পাতা দুটোতেই পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে; যা একে দিনদিন জনপ্রিয় করে তুলছে।