চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৭ পিএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৮ পিএম
অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক নারীকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে ক্ষমা চেয়ে পার পায় ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে শনিবার রাতে দ্বিতীয়বার ইউপি চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী সীমা রানী দাসের বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এ সময় স্থানীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকালে তিনি সীমা রানীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নিজাম কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
সীমা হাজিরহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কৈলাশ সরকারের বাড়ির শুশান্ত দাস। তবে তাদের মূল বাড়ি রামগতি উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নে। মেঘনা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ২০ বছর আগে তারা হাজিরহাট ইউনিয়নে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
সীমা রানীর অভিযোগ, তার কাছে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত দুটি টোকেন ছিল। ওই টোকেনগুলো নিয়ে তিনি চাল নিতে পরিষদে যান। দুটি টোকেন দেখেই চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। শত শত লোকজনের সামনে তাকে ‘চাল চোর’ বলে অপমান করে। তিন থাপ্পড়ে সীমার ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে ভিজিএফের আওতায় ইউনিয়নের দুস্থদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এর আগে দুস্থদের মাঝে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত টোকেন সরবরাহ করা হয়েছে। ওই টোকেন নিয়েই তারা চালের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন। সীমা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত দুটি টোকেন পেয়েছেন। ওই টোকেনগুলো নিয়েই চাল নিতে আসেন। অতিরিক্ত টোকেন নিয়ে আসায় চেয়ারম্যান তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেন এবং লাঞ্ছিত করেন। ওই নারীকে ‘চাল চোর’ বলেও আখ্যায়িত করেন চেয়ারম্যান।
স্থানীয়রা জানায়, একাধিক টোকেন নিয়ে যে কেউ চাল নিতেই পারে। পাড়া প্রতিবেশীদের চাল একজনে পরিষদ থেকে নিয়ে আসে। ওই নারী একাধিক টোকেন নিয়ে চাল নিতে গিয়ে কোনো অন্যায় করেননি।
সীমা রানী বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে টোকেন দিয়েছে। চাল আনতে গেলে চেয়ারম্যান আমাকে তিনটা থাপ্পড় দিয়েছে। চোর বলে অপমান করেছে। আমি হতভম্ব হয়ে গেছি।
হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) ও উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, কোনো নারীর গায়ে হাত তোলা অপরাধ। একজন ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে তিনি কাজটি ঠিক করেননি। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। এতে চেয়ারম্যান বাজারে এসে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে ক্ষমা চেয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার একজনে ১০ কেজি করে চাল পাবে। কিন্তু সীমা দুই-তিনটা টোকেন নিয়ে আসছিল। সে চাল নিয়ে যাবার সময় আমি তাকে আটকেয়েছি। বাড়তি চাল রেখে দিতে চেয়েছি। কিন্তু রেখে দিইনি। এনিয়ে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে বসে ঘটনাটি মীমাংসা করে এসেছি। তাকে থাপ্পড়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।
হাজির ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। চেয়ারম্যান বলেছে- এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।