বান্দরবানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫১ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৯ পিএম
বান্দরবান পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রবা ফটো
কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে দেব না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যেকোনো মূল্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে দেব না।’
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে বান্দরবান সার্কিট হাউসে পার্বত্য এলাকার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা একসময় খুব শান্তিপ্রিয় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংক ডাকাতির মতো বড় ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে। এর আগেও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। এসব কার্যক্রম আমরা আন-চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেব না। এদের পেছনে কোনো ইন্দন আছে কি না, তাও বের করে নেওয়া হবে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বান্দরবানের রুমায় শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে পৌঁছার পর প্রথমে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স , আনসার ব্যারাক, সোনালী ব্যাংক ও মসজিদ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরিদর্শন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় বান্দরবান সার্কিট হাউসে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদার মতবিনিময় করেন।
মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘একটি সশস্ত্র সংগঠন তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধ করেছে। কাজেই রাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না। আমরা এর জন্য যা যা করণীয় তা-ই করব। আইনশৃঙ্খলার জন্য আমরা পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ এবং সীমান্তে বিজিবি বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীর প্রধানকে নির্দেশনা দিয়েছেন সবাই মিলে যেন যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার আগে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে দেব না।
তিনি বলেন, আমরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে দুইবার আলোচনায় বসেছেন। তারা আলোচনায় না গিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে।;
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ ঘটনায় জড়িত; তারা যাদি বিদেশেও আশ্রয় নেয় আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত এনে বিচারের ব্যবস্থা করব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার, জনগণ চাইলে কেএনএফের সঙ্গে আবারও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। আরেক এক প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, ব্যাংক ডাকাতির মতো এ ঘটনায় কোনো সংস্থা দায়িত্ব পালনে তাদের কোনো ঘাটতি গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি, বান্দরবানের বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মাহাবুবুর রহমান, আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার মো. মেহেদি হাসান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মুজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ সামরিক-বেসামরিক।কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাত ৮টার সময় রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকে গ্রিল ভেঙে হামলা চালায়। ওই সময় গার্ড পুলিশের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ এপ্রিল দিনদুপুরে থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা করে টাকা লুট করা হয়।
রুমায় ডাকাতির একপর্যায়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কেএনএফ সদস্যদের বেধড়ক মারধরের শিকার হওয়া পুলিশের দুই সদস্য গুরুতর আহত হন। তারা বর্তমানে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় রুমা ও থানচি উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুটের ঘটনায় দুই শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে রুমায় ৪টি ও থানচি থানায় ২টি মোট ৬টি মামলা করা হয়েছে।