টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:০৭ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৩ পিএম
মিয়ানমার-টেকনাফ সীমান্ত। প্রবা ফটো
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ওপার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
গত ৩০ মার্চের পর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকে এপারের সীমান্তে থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বদিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, শিলখালী, নাকপুরা, হাস্যুরাতা ও নাখ্যংদিয়া থেকে মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। নতুন করে ওইসব এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এসব এলাকায় আরাকান আর্মি ও সেদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘাত হয়। সীমান্তের এসব এলাকায় শনিবার ভোররাত পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে।
বিশেষ করে সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, ঝিমংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরানবাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ সদরের আলীখালি, লেদা, মুচনী, জাদীমুড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা দিনমজুর আব্দুল লতিফ বলেন, ‘এক অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসে, বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। ক্ষেতে কাজ করতে গেলে ভয়ে ভয়ে কোদাল মারি। কোন সময় যেন এসে গায়ে লাগে, ভয়ে থাকি।’
টেকনাফের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা সালাম মিয়া ইজিবাইকচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আজকে ভোরে ইজিবাইক চালাতে বের হলে আমি হঠাৎ চমকে উঠি। মনে হচ্ছে ভূমিকম্পে সব উল্টে যাচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘গোলাগুলির শব্দ কিছুদিন তেমন শোনা না গেলেও এখন আবার থেমে থেমে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মিয়ানমারে দুই পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।’
সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের অপারেশন আরও বেশি ভয়ংকর রূপ নেবে। এ ছাড়া গোপন সূত্রে জানতে পারলাম ট্রলারে করে কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তে ঢুকে যাচ্ছে। তবে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, কারও বাসাবাড়িতে অবস্থান করছে কি না। যদি আমরা খবর পাই, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দিকে আজকে বিস্ফোরণের শব্দ অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে।’
সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।