× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভাইয়ের মৃত্যুতে আনন্দেরও মৃত্যু

তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৮ পিএম

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০০ পিএম

কামরান হাবিব রকি। প্রবা ফটো

কামরান হাবিব রকি। প্রবা ফটো

‘ভাইয়ের মৃত্যুর সাথে সাথে ঈদের আনন্দেরও মৃত্যু হয়েছে। ভাই থাকতে ঈদের আনন্দ ছিল। রমজানে ও ঈদে আনন্দে বাড়িটা যেন মশগুল হয়ে উঠত। বাড়িটা এখন ভুতুড়ে হয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। আমি আর ভাইয়া এক বিছানায় ঘুমাতাম। ঈদের আগে ভাইয়া আর আমি একসঙ্গে আনন্দ করতাম। আমি ভাইয়াকে ফোন দিলে কখনোই রিসিভ না করে থাকেনি। বিশেষ কারণে রিসিভ করতে না পারলেও এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে আমাকে ফোন দিত।’ বলছিলেন রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনে আগুনে নিহত কামরান হাবিব রকির ছোট ভাই কামরান হাবিব সাজিম। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে আগুনে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে একজন ছিলেন রকি।

সাজিম বলেন, ‘সেই রাতে একশবারের বেশি ভাইয়াকে ফোন দিই, কিন্তু ভাইয়া আর ফোন ধরেনি। তখনই বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করতে থাকে। সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, দোয়া-দরুদ পড়তে থাকে। রমজানের ঈদ-আনন্দ সবই কেড়ে নিয়েছে সেই আগুন।’

রকির মা রিপা বেগমের কাছে তার ছেলের কথা জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘রকি আমার বড় ছেলে। সে সবে আলেম পাস করেছিল। ওর বাবা ইজিবাইক চালাত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় রকি ঢাকায় যায় টাকা-পয়সা আয়ের জন্য। সেখানে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় ক্যাশিয়ারের পদে চাকরি নেয়। এই চাকরি যে কাল হবে কে জানত। রকির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের জীবনে এখন আর আনন্দের কিছু নেই। শুধু বেদনা আর বেদনা।’ ছেলের মৃত্যুর পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি নিহতদের পরিবারের লোকজনকে ২৫ হাজার করে টাকা দিয়েছে, কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত একটা টাকাও পাইনি। আমার মেজো ছেলে সাজিম নতুনহাট পাবলিক কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলেটা প্রতিবন্ধী। একমাত্র রকির উপার্জিত অর্থ দিয়ে মেজো ছেলের লেখাপড়া, ছোট ছেলে তাসিন এবং রকির বাবার চিকিৎসা ও সংসার চলত। এখন আমাদের দেখার কেউ নাই।’ এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবং সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

দাদি রেহেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সোনা দাদুভাইয়ের এখনও কাজ করার বয়স হয়নি। সবে আলেম পাস করেছিল। আমার ছেলে অসুস্থ। সেও কাজ করতে পারে না। রকির পরেরটাও ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তার ছোটটা দুই-তিন চার বছরের ভাই। সেও প্রতিবন্ধী। তার পেছনে প্রতি মাসে প্রচুর টাকার ওষুধ লাগে। এসব দেখে পরিবারের হাল ধরতে আমার সোনা ঢাকায় চাকরি করতে চলে যায়। আর সেই যাওয়াই যে কাল হবে, আগে জানলে আমি তাকে যেতে দিতাম না।’ এ কথা বলেই তিনি আবার কাঁদতে শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার আর একটা ছেলে। সেও মাত্র ৪০ বছর বয়সে স্ট্রোক করে মারা গেছে। সেই বিধবা বউটাও তার তিনটি সন্তান নিয়ে আমার কাছে রয়েছে। এখন এত বড় বোঝা আমি কীভাবে টানব। শুনেছি নিহতদের সরকার নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা একটি টাকাও প্রতিষ্ঠান বা সরকারের পক্ষ থেকে পাইনি। যদি সরকার আমাদের দিকে একটি মুখ তুলে তাকায়, তাহলে পরিবারের লোকগুলোকে বাঁচানো যায়। লেখাপড়া চালানো সম্ভব হয়।’ না হলে রকির চিন্তায় এরাও মারা যাবে বলে তিনি আবার কাঁদতে থাকেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার মতো কোনো নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি। এমনকি কোনো টাকা-পয়সাও আসেনি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার মাধ্যমে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা এলে অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে তাদের দেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা