আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৬ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম
সোনাগাজী উপজেলায় ৮০ শতাংশ মুরগির খামার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়ন খালপাড়ে অবস্থিত। খামারের বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। প্রবা ফটো
খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। দূষিত হচ্ছে খালের পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। খালের দূষিত পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারছে না স্থানীয় কৃষক। দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে ফসলের জমিতে। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের, মৎস্যচাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ঘটনাটি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নের। এখানে কোনো নিয়মনীতি না মেনে খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, সোনাগাজী উপজেলায় ৫২৩টি মুরগির খামার রয়েছে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ খামার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নের খালের পাড়ে অবস্থিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, নবাবপুর-আমিরাবাদ ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকার খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার। খালের দুই পাশে খালপাড় ভরাট করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। মুরগির বর্জ্যে ও ময়লায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগে থেকেই। মুরগির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পানি কালো হয়ে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালের পাড়ের খামারি পাইপের মাধ্যমে খামারের বর্জ্য খালে ফেলছেন। খাল থেকে একটু দূরের খামারিও মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য খালে যাচ্ছে।
মার্চ মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় খালে বর্জ্য ফেলার কারণে পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খামারিদের মুরগির বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। কৃষকরা আগে তাদের চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না। তাদের দাবি, বর্জ্যে দূষিত হয়ে খাল-বিল ও জলাশয়কে বিষের খনিতে পরিণত করেছে। এতে কৃষকদের বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই চাষাবাদ করতে হয়।
শিক্ষক মহিন উদ্দিন জানান, খালটির দূষণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। দিনের বেলায় দুর্গন্ধ কিছুটা কম থাকলেও রাতে দুর্গন্ধ বাড়ে। বেড়ে গেছে মশামাছির উপদ্রব।
কৃষক আবুল খায়ের বলেন, পানিদূষণের আগে খালের পানিতে নানা ধরনের দেশীয় মাছ আসত। এখন দূষণের কারণে মাছে তো দূরের কথা, খালের পানিতে ব্যাঙ বা সাপও নেই। এ ছাড়া বর্ষাকালে খালের পানি উপচে ছড়িয়ে পড়ে ফসলের জমিতে ফলন কমে যাচ্ছে।
কয়েকজন মুরগির খামারি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খামারের বর্জ্য ও পানি সরাসরি খালে ফেলা হয় না। খালের পানিতে নিয়মিত ওষুধ ও চুন দেওয়া হয়। জৈবসার উৎপাদনের কারণে কিছু গন্ধ হয়।
খামারি নুর নবী ও সবুজ জানান, আমরা কয়েকজন খামারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেছি। সবাই যদি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করে তাহলে খালের পানিতে এত ময়লা হবে না। যারা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, মুরগির খামারের বর্জ্যে খালের পানি একেবারে দূষিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় একাধিকবার বলা হলেও খামারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেবু লাল দত্ত বলেন, খামারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও খামার বায়োসিকিউরিটির আওতায় নিয়ে আসার জন্য খামারিদের বার বার চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নির্দেশনা মানছে না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট না থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট আছে কি না জরিপ করা হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, খামারের বর্জ্যে খালের পানির অবস্থা খুব খারাপ। পানির দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ কষ্টে আছেন। কৃষকরাও খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারছে না। খামারগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।