সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ
হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৫ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৭ পিএম
নাবিক সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদের সময় কাটে সন্তানের জন্য প্রার্থনায়। প্রবা ফটো
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক টাঙ্গাইলের সাব্বিরের বাড়িতে নেই ঈদের আনন্দ। গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের অপেক্ষায় সময় পার করছেন সাব্বিরের বৃদ্ধ মা-বাবা। বাড়িতে বসে নামাজ আদায় করে তাদের সন্তান ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে সময় পার করছেন। আর মাঝেমধ্যেই ছেলের ছবি বা মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কোনো সংবাদ এলো কি না তা দেখতে। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। তারা চান ঈদের আগেই যেন তাদের সন্তানের মুক্তি মেলে।
গত বছরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করেছেন নাবিক সাব্বির। কিন্তু এ বছর জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর সাব্বিরের ভাগ্যে কী ঘটছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই তার পরিবারে।
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে আছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে সাব্বির। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ছেলের অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছেন। ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে সুসংবাদের অপেক্ষায় বন্দি নাবিক সাব্বিরের বাবা-মা।
সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর ছেলে ঈদের কেনাকাটা করে, এবার কিছুই হয়নি তাদের। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদে ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন তার বাবা-মা। জলদস্যুরা কথায় কথায় মাথায় বন্দুক ধরে, জাহাজে খাবার সংকট, পানি সংকট এমন নানা দুশ্চিন্তায় আরও ভেঙে পড়েছেন তারা। সন্তানের একটা ভালো সংবাদের অপেক্ষা আর শেষ হয় না তাদের।
সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর একদিন ছেলের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারপর আর কথা হয়নি। আমি ও আমার স্ত্রী ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকি কখন সাব্বির কল দিয়ে বলবে ভালো আছি চিন্তা করো না তোমরা। আমার গত বছর একসঙ্গে ঈদ করেছি। এবারও আশায় আছি, জানি না করতে পারব কি না। সরকারের কাছে দাবি জানাই অতি দ্রুত আমার ছেলেসহ সব নাবিক যেন বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা নিক।’
সাব্বিরের মা সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ঈদ করতে পারবে কি না জানি না’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু চাই না আমার ছেলেকে চাই। আমরা ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। ছেলে বাড়ি না এলে আমাদের আর ঈদ করা হবে না।’
সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, ‘যখন তারা দস্যুদের কবলে আটক হয় তখন বলেছিল ২০-২২ দিনের খাবার আছে। তারপর আর কথা হয়নি আমার ভাইয়ের সঙ্গে। কেমন আছে তাও বলতে পারব না। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি আমরা।’
তিনি জানান, ভাইয়ের চিন্তায় বাবা-মা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন না। তারা সারাক্ষণ কান্না করেন আর বলেন আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার একমাত্র ভাইয়ের কিছু হলে বাবা-মাকে বাঁচাতে পারব না। সরকারের কাছে দাবিÑ আমার ভাইকে ঈদের আগেই ফিরিয়ে আনা হোক।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে খোঁজখবর রাখছি। ঈদ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে ঈদ উপহার পাঠানো হবে।