× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লোডশেডিংয়ে ক্ষোভ

রাইতের ঘুম হারাম হইয়্যা গ্যাছে

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৫ পিএম

রাইতের ঘুম হারাম হইয়্যা গ্যাছে

এপ্রিলের শুরুতে অল্প গরমেই ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির সময় লোডশেডিং মেনে নিতে পারছেন না রোজাদাররা। ফলে বেড়েছে মোমবাতি ও চার্জার লাইটের ব্যবহার। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এ পরিস্থিতি খারাপ আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীরা লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ব্যাহত হচ্ছে ইরিক্ষেতের সেচকাজ। প্রতিদিন দেশের বিভিন্নি এলাকায় দুঃসহ লোডশেডিংয়ের খবর আসছে। অনেক জায়গায় দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না, যা বিদ্যুৎকর্মীরাও স্বীকার করছেন। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় দেশবাসীকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সিলেট শহরের জিন্দাবাজার এলাকার দোকানি মো. ইয়াহিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে মার্কেটে আসা ক্রেতারা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন, যার কারণে ব্যবসা পুরোপুরি জমে ঊঠছে না।’ শহরের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা জুনেদুর রহমান বলেন, ‘সারাদিন রোজা রাখার পর যখন ইফতার করব তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। মোবাইলের আলো দিয়ে ইফতার করতে হয়। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।’

সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট। অনেক সময় সরবরাহ করা হয় চাহিদার অর্ধেক। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ার কারণে সিলেটের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগন্তিতে পোহাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর হায়দার বলেন, ‘গ্রাহকদের সেবা দিতে আমরা আন্তরিক রয়েছি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম সরবরাহের কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।’

নরসিংদীতে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে লম্বা লোডশেডিং। মাঝে মাঝেই দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারছে না মানুষ। জেলা বা পৌরশহরে বিদ্যুৎ কিছু সময় থাকলেও শহরতলি ও গ্রামগঞ্জের অবস্থা খারাপ। নরসিংদী শহরের অটোরিকশাচালক মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘দিনের বেলায় রাস্তায় থাহি। গরম হজম হইয়্যা গ্যাছে। এতদিন রাইতে একটু আরামে ঘুমাইছিলাম। এহন রাইতের ঘুমও হারাম হইয়্যা গ্যাছে। রাইতে তিন-চাইরবার কারেন যায়। ঘুমামু ক্যামনে।’ বিদ্যুৎ নিয়ে ফেসবুকে গ্রাহকরা উপহাসসহ অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

শহরের ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা শরিফ হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে দিনের বেলা লোডশেডিং। রাতেও বিদ্যুৎ থাকে না। রাতের লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায় না। ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারছে না।’ নরসিংদীর সিভিল সার্জন ফারহানা আহমেদ বলেন, গরমে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর শিবলী বলেন, গরমের সাথে বিদ্যুৎতের চাহিদা বেড়েছে। একদিকে গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে গরমে চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। নরসিংদীর মাধবদী ও পলাশ উপজেলায় নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এ বিদ্যুতের চাহিদা ১২৮ মেঘাওয়াট, সরবরাহ হচ্ছে ১১২ মেঘাওয়াট। নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার শেখ মানোয়ার মোরশেদ বলেন, তাদের চাহিদা দৈনিক ১৯০-২০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ হচ্ছে ১৪০-১৫০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। এর সাথে লোডশেডিং। সেহরি ও ইফতারের সময়ও লোডশেডিং হওয়ায় ক্ষুব্ধ হচ্চে মানুষ। দিনে-রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। গত শনিবার এ উপজেলায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ফলে সেচকাজ ও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে খানসামা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম ইফতেখার আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। এজন্য আপাতত দিনে তিন ঘণ্টা পরপর এক ঘণ্টা এবং রাতে দুই ঘণ্টা পরপর এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে বলে তিনি জানান।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ আরো বেশি রাঙ্গিয়ে তুলতে নতুন পোশাকের জুড়ি নাই। ইতিমধ্যে প্রায় সবার ঈদের কেনাকাটা শেষ। তবে এবার হাসি ফোটেনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দর্জিদের মুখে। একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে রেডিমেড কাপড়ের সরবরাহ বৃদ্ধি। যে দর্জিরা এক সময় রমজানে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাতেন, তাদের এবার ব্যস্ততা কমে গেছে। গত বছর যে পরিমাণ কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার হয়েছে এবার তার অর্ধেকও হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে আবার ধারাবাহিক লোডশেডিং। ঠিক সময়ে কাপড় ডেলিভারির শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

উপজেলার সবচেয়ে বড় কাপড়ের বাজার চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার। এই বাজারের দর্জি মো. সোহেল বলেন, ‘আগে আমাদের দোকানে নিয়মিত চার-পাঁচজন কারিগর কাজ করতেন। কাজ কম থাকলেও যা আছে তা ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিক সময়ে ডেলিভারি হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’ এবার কারিগর কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাকের ভিড়ে মানুষ আগের চেয়ে কম আসে দর্জির দোকানে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, এবার রেডিমেড কাপড়ই বেশি বিক্রি হচ্ছে। মো. সালাউদ্দিন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আমাদের অধিকাংশ কালেকশন ছিল রেডিমেড কাপড়। দাম ও সেলাইয়ের ঝামেলা বিবেচনায় রেডিমেড কাপড়ে ক্রেতারাও সন্তুষ্ট থাকে। ধীরে ধীরে ক্রেতারা রেডিমেড কাপড়ের দিকে ঝুঁকেছে।’

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় সকল কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। রমজান মাসে সেহেরি ও ইফতারের সময়ও বিদ্যুৎ না থাকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. শাহীন রেজা ফরাজী বলেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হচ্ছে। তাই লোডশেডিং। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রাহকদের স্থানে আমি নিজে থাকলেও একই প্রশ্ন করতাম।’ কবে নাগাদ বিদ্যুতের অভাব মিটবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা