× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধের ওয়াদা ভঙ্গ করল কেএনএফ?

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪৭ এএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩১ এএম

রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে অর্থ লুট ও  শাখার ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কেএনএফের সদস্যরা। প্রবা ফটো

রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে অর্থ লুট ও শাখার ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কেএনএফের সদস্যরা। প্রবা ফটো

বান্দরবানের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। গত ৫ মার্চ রুমা উপজেলার বেথেলপাড়ায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই স্মারকের ৬ নম্বর শর্তে লেখা আছে, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলাকালে কেএনএফ কোনো ধরনের সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হবে না।’ 

শান্তি আলোচনায় বসে এমন ওয়াদা করার মাস না পেরোতেই কেএনএফের বিরুদ্ধে ওয়াদাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাত ও  বুধবার (৩ এপ্রিল) দিনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রুমা ও থানছি এলাকার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতি করে। এই সময় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজামুদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বুধবার রাতে (৮টা) এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপহৃত নিজামুদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। অস্ত্র লুটের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে ফের স্বরূপে ফেরার বার্তা দিয়েছে কেএনএফ। 

ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্রলুট এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপককে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার জন্য কেএনএফের সদস্যরা জড়িত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। 

শান্তি প্রতিষ্ঠার সময়ে সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পর এক মাস না যেতেই কেন কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে কেএনএফ চেয়ারম্যান নাথান বমের উপদেষ্টা লালএংলিয়ান বম গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখন অসুস্থ। রুমা এবং থানচির ঘটনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি। বিস্তারিত কিছু জানি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেখানে ঘটনা ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে আমি এখনও জানি না। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপের পর প্রকৃত তথ্য জানতে পারব। এখন সরকারি বাহিনী কেএনএফকে দায়ী করছে। আমি বলব, বান্দরবানে কি সংগঠন হিসেবে শুধু কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট আছে? আরও সশস্ত্র সংগঠন কি নেই? ওসব সংগঠনের সদস্যরা যে এমন কাণ্ড ঘটায়নি সেটা কীভাবে নিশ্চিতভাবে বলবেন?’ 

ওই এলাকায় ২০২২ সাল থেকে সক্রিয় আছে কেএনএফ। এ কারণেই সরকারপক্ষ কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছে। অন্য পক্ষ তো সাম্প্রতিক সময়ে এতটা সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েনি। এই কারণেই কেএনএফকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন বক্তব্যের জবাবে লালএংলিয়ান বম বলেন, ‘আমি শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত অংশটুকু দেখি। এর বাইরে অন্য কিছু দেখি না। আমি দলের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলব। তারপর পুনরায় কথা বলতে পারব।’ কেএনএফে’র অভ্যন্তরে কোনো বিরোধ দেখা দিয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি না জেনে কোনো কথা বলতে চাই না।’ 

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর সমঝোতার সময় আলোচনার টেবিলে উপস্থিত ছিলেন কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক লালজংময়। ওই দিনের সমঝোতা স্মারকের ৭ নম্বর শর্তে লেখা আছে, আগামী ২২ এপ্রিল পুনরায় বৈঠক হতে পারে। এ ছাড়া ৬নং শর্তে লেখা আছে, উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা সংলাপের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে উভয় পক্ষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কেএনএফ সমঝোতা স্মারকের এই অংশটুকু অমান্য করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। 

কেএনএফের একজন নেতা জানিয়েছেন, গত ৫ মার্চ আলোচনার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেএনএফের একাধিক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আটক করেছিল। পরে অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে তাদের মুক্ত করা গেছে। এ ছাড়া কেএনএফ যে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে সেই বিষয়ে গত এক মাসে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তাও পায়নি কুকি-চিন সম্প্রদায়। এই কারণেই ক্ষুব্ধ নিয়ে অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতি এবং অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক লালজংময়কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। 

তবে নাম প্রকাশ হবে না শর্তে বান্দরবানে কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে উদ্ধারে। তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা কাজ করছেন। ওই কর্মকর্তা সরাসরি কেএনএফের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বান্দরবানকে এই মুহূর্তে কারা অশান্ত করতে চায়, সেই বিষয়ে সবারই কম-বেশি ধারণা আছে। যদি কেউ নিজেদের আড়াল করার জন্য অসত্য তথ্য দেয়, তাহলে বলার কিছু নেই। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কথা বলবে না। 

প্রসঙ্গত বান্দরবানে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে কেএনএফ নামের একটি সংগঠন। পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে এই পর্যন্ত প্রাণক্ষয় হয়েছে ১৭ জনের। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের জন্য জঙ্গিদের ডেরা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। ধারাবাহিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় একপর্যায়ে রাষ্ট্র শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। আর কেএনএফর পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন চেয়ারম্যান নাথান বমের উপদেষ্টা লালএংলিয়ান বম। শুরুতে ভার্চুয়ালি সভা হলেও পরে দুই দফা সরাসরি বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সভা অত্যন্ত সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে বলে নিশ্চিত করে উভয়পক্ষ। সেই সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হঠাৎ কেন সহিংষ্ণতার পথে হাটল-এমন প্রশ্নের উত্তর গতকাল রাত পর্যন্ত কোনো পক্ষের কাছ থেকেই পাওয়া যায়নি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা