× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্রয় দিচ্ছে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ

সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০০ পিএম

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৭ পিএম

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, খুলনা। প্রবা ফটো

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, খুলনা। প্রবা ফটো

খুলনায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও আটা সরবরাহকারী মিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও গত দুই বছরে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। এমনকি ওএমএসের আটা সরবরাহকারী মিলগুলোর কয়েকটি এক থেকে দুই বছর বন্ধ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা না নিয়ে বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব মিল সচল ও উৎপাদনশীল আছে কি না সে বিষয়ে পরিদর্শকদের নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গম বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এসব মিলমালিক ও পরিদর্শকরা বছরের পর বছর সরকারি গম বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয় করছেন।এতে সরকারি টাকার যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি নিম্নমানের আটা সরবরাহের কারণে নিম্নআয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। 

সম্প্রতি ওএমএস ডিলারদের অভিযোগ ও স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের পরিদর্শনে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কয়েকটি আটা মিলের বরাদ্দ স্থগিত করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে কয়েক মাস না যেতেই মিলগুলোকে আবারও সরকারি বরাদ্দ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর কারণে সচল ও ভালো মিলগুলোকে তাদের প্রাপ্য বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব খাদ্য পরিদর্শকের প্রতিবেদন ও সুপারিশে এসব অনিয়ম হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মিলমালিক, স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ ও নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত মিলমালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তারা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনার সাবেক আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজুল ইসলামের নির্দেশে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদল কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে পল্লব ঘোষ ও শফিকুল ইসলামকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে বিশেষ টিম ওএমএসের আটা সরবরাহকারী মিলগুলো পরিদর্শন করেন। গত বছরের নভেম্বরে ২৯টি মিলের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে অনিয়ম, ত্রুটিপূর্ণ, বন্ধ এবং উৎপাদশীল না থাকায় ৪টি মিলের বরাদ্দ স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে স্থগিতকৃত রূপসার মেসার্স নিকলাপুর ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, খালিশপুর পুরাতন যশোর রোডের মের্সাস হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, ফুলবাড়ী গেটের মেসার্স ভাই ভাই ফ্লাওয়ার মিল ও খানজাহান আলী রোডের মেসার্স ডায়মন্ড ফ্লাওয়ার মিলের বরাদ্দ বন্ধ ও চাহিদাপত্র স্থগিত করা হয়। তবে আবারও মিল সচল করায় হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ভাই ভাই ফ্লাওয়ার মিলের বরাদ্দ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চালু করা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আটা-ময়দা মিলমালিক অভিযোগ করেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে চাল-আটা বিক্রির জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে মিলমালিকদেরকে গম বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সেখান থেকে ওএমএস ডিলারদেরকে মিল মালিকরা আটা সরবরাহ করে। কিন্তু গত প্রায় দুই বছর থেকে বন্ধ থাকা কিছু মিলমালিক সরকারের বরাদ্দ গম নিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে নিম্নমানের আটা কিনে ডিলারদের সরবরাহ করছে। এমনকি অনেক মিল বন্ধ থাকলেও খাদ্য অধিদপ্তর সেসব বন্ধ মিলকে শত শত টন গম বরাদ্দ দিয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সুপারিশে গত বছরের নভেম্বরে চারটি মিলের উপবরাদ্দ বন্ধ ও চাহিদাপত্র প্রেরণ স্থগিত করা হয়। কিন্তু প্রতারণা ও অপরাধের পরও মাত্র ২ মাস পরেই খাদ্য বিভাগ হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ভাই ভাই ফ্লাওয়ার মিলকে গম বরাদ্দ দিয়েছে। মিলগুলো বড় ধরনের অপরাধ করেও শাস্তি পাচ্ছে না। একই সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা এসব অনিয়মে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য বিভাগ। যা অন্যদের এমন অপকর্ম করতে উৎসাহিত করবে। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আটা মিলগুলো বরাদ্দে উপকমিটির যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাজে অবহেলা ও গাফিলতি দেখা  গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ব্যস্ততার কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। 

সদ্য যোগ দেওয়া খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘আমি অল্প কয়েক দিন হয়েছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে এখানে যোগদান করেছি। বিষয়টি মাত্রই জানলাম। খুলনায় সরকারের ওএমএসের কার্যক্রমে আটা সরবরাহকারী বেসরকারি কতটি মিল আছে সেটিও আমি জানি না। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে। এমন খবর প্রকাশের পর দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এমন ৪টি মিলের বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিলগুলো বন্ধ থাকার পরও গম বরাদ্দ পেয়েছে এবং গমগুলো বাজারে বিক্রয় করে অন্য কোথাও থেকে আটা কিনে তারা ডিলারদেরকে সরবরাহ করেছে। এটা ফৌজদারি অপরাধ। এর বিরুদ্ধে খাদ্য বিভাগের মামলা করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। এগুলো হয় না বলেই আবার নতুন করে দুর্নীতি শুরু হয়। সুতরাং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের কাছেও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এসব দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা না গেলে দুর্নীতি সাময়িক বন্ধ হবে আবার দ্বিগুণ উৎসাহে শুরু হবে। 

সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক (চ: দা:) মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে স্থানীয়ভাবে সব জায়গায় গিয়ে মনিটরিং করা সম্ভব নয়। যেসব মিল বন্ধ থাকে তাদের মালিকদের আবেদন করতে হয়, আমি আপাতত বরাদ্দ নিব না। কিন্তু তারা এটা না করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। আমাদের কর্মকর্তারাও হয়তো খেয়াল করে না অথবা তাদের মধ্যে যোগসাজশ থাকতে পারে। কোনো মিল বন্ধ থাকার পরও যদি তাদের বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনা ঘটেÑ এ ক্ষেত্রে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা না জানালে আমরা এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে জানতেও পারব না। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক যদি ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে তাহলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা