× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভালো নেই হাতে ভাজা মুড়ির কারিগররা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১২ এএম

মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত টাঙ্গাইলের দৌলতপুর গ্রামের এক মুড়ি কারিগর

মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত টাঙ্গাইলের দৌলতপুর গ্রামের এক মুড়ি কারিগর

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের মুড়ির চাহিদা দেশজুড়ে। মুড়ির চাহিদা বছরব্যাপী থাকলেও রোজার সময় উৎপাদন ও বিক্রি বাড়ে দ্বিগুণ। ফলে মুড়ি ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন রমজানের। আবার অনেকে এ মাসে সিজনাল ব্যবসা হিসেবে মুড়ি উৎপাদনও বিক্রি করেন। বর্তমানে এখানকার মুড়ি কারিগর ও ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত নেই।

জানা যায়, টাঙ্গাইলসহ দেশের আট জেলায় মুড়ি সরবরাহ হয় কালিহাতীর নারান্দিয়া থেকে। এখানকার উৎপাদিত মুড়ির সুনাম দেশের বিভিন্ন স্থানে। মুড়ি উৎপাদনের সঙ্গে নারান্দিয়ার মানুষ অনেক আগে থেকেই জড়িত। এখানে দুই ভাবে মুড়ি উৎপাদিত হয়। হাতে ভেজে ও মেশিনের সাহায্যে। মুড়ি উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে নারান্দিয়া শীর্ষে। নারান্দিয়ার শতাধিক বাড়িতে হাতে ভেজে মুড়ি উৎপাদিত হয়। মেশিনের সাহায্যে মুড়ি উৎপাদন নতুন সংযোজন হলেও হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি এবং বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে শতাধিক পরিবার অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে মোদক সম্প্রদায়। নারান্দিয়া ছাড়াও উপজেলার মাইস্তা, নগরবাড়ী, দৌলতপুর, লুহুরিয়া, সিংহটিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের কয়েকশ পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করে। এক ব্যক্তি এক দিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন। প্রতি মণ চালে ২২-২৩ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৯০-১০০ ও খুচরা ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত গ্রামের মহিলারাই হাতে ভেজে গুণগত মানসম্মত মুড়ি তৈরি করেন।

দৌলতপুর গ্রামের কণিকা রানী মোদক বলেন, ‘আমরা বংশপরম্পরায় মুড়ি ভাজা ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমি ২০ বছর ধরে মুড়ি ভাজি। ধান সেদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্য চাল তৈরি করা হয়। পরে সে চাল দিয়ে লবণপানির মিশ্রণে আগুনের তাপ সহ্য করে বিশুদ্ধ মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। সবকিছুর দাম বেশি। পরিশ্রমের তুলনায় খুব একটা লাভ হয় না। এজন্য অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। নতুন করে এ পেশায় আর কেউ আসছে না। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই। সরকার সহযোগিতা করলে এ পেশা টিকিয়ে রাখতে পারব।’

অধীর মোদক বলেন, ‘মুড়ি ভাজার প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ টাকা। এক মণ ধানের মুড়ি ভাজতে খড়ি, লবণ, যাতায়াত ও ধান ভাঙানোর খরচ আরও ১৫০ টাকা। সব খরচ বাদে বেশি লাভ হয় না। এক মণ ধানের মুড়ি ভাজলে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়। তা দিয়ে আর চলে না। আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই।’


মুড়ির কারিগরসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদন এবং বেচাকেনা হয়। তবে পরিশ্রমের লাভ বেশিরভাগই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। রমজানে দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা পিকআপ, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে বস্তা ভর্তি মুড়ি কিনে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করেন। যাতায়াতব্যবস্থা ভালো থাকায় পাশের সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া ও ঢাকায় নারান্দিয়ার মুড়ি সরবরাহ হয়।

তবে প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা। মেশিনে মুড়ি ভাজতে সময় কম লাগে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি। অন্যদিকে হাতে মুড়ি ভাজতে সময় বেশি লাগে কিন্তু লাভ সামান্য। ফলে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা দিন দিন এ কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছেন এবং অনেকেই চলে গেছেন। এ পেশা টিকিয়ে রাখতে উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

সততা মুড়ি মিলের স্বত্বাধিকারী শংকরচন্দ্র মোদক বলেন, ‘রমজানে আমরা অনেক সময় মোবাইলেও মুড়ির অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করে থাকি। তা ছাড়া নির্দিষ্ট বাজারে স্থায়ী গ্রাহকরা মুড়ি কিনে থাকেন। রমজান ছাড়া বছরের অন্য সময়ে অর্ধেকে নেমে আসে। শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ও বিপুলসংখ্যক মানুষ পরোক্ষভাবে মুড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে রমজানে কাজের চাপে দম ফেলার সময়টুকু পান না মুড়ি উৎপাদনকারীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি মুড়ি ৭০ টাকায় বিক্রি করি। খুচরা ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৪৩-৪৪ কেজি মুড়ি হয়। রমজানে আমাদের মিলে গড়ে ১ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়ে থাকে।’

এদিকে মেশিনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ মুড়ি প্রতিনিয়ত উৎপাদিত হলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। মেশিনে ভাজা মুড়ি সাদা ও লম্বা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইউরিয়া কিংবা সোডা ব্যবহারের অভিযোগ থাকায় একশ্রেণির মানুষ সর্বদাই বিষমুক্ত হাতে ভাজা মুড়ি খেয়ে থাকে।

নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম মিয়া বলেন, ‘দেশের মুড়ি উৎপাদনের অন্যতম স্থান কালিহাতীর নারান্দিয়া গ্রাম। এ গ্রামের উৎপাদিত লাখ লাখ টাকার মুড়ি সারা দেশে যাচ্ছে। মানুষের চাহিদা পূরণে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে হাতে ভাজা লোকদের ক্ষেত্রে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেশিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছেন না হাতে ভাজা মুড়ির কারিগররা। ফলে জীবনজীবিকার তাগিদে তারা অন্য পেশায় ছুটছেন।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘কালিহাতীর নারান্দিয়া গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক মানুষদের অবশ্যই সরকারি সাহায্য করার সুযোগ আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের তালিকা করে কম সুদে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণদানের উদ্যোগ নেব। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানকার হাতে ভাজা মুড়ির ব্র্যান্ডিং ও আরও প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা