তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৫ এএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
ইমিগ্রেশনের অপেক্ষায় ভারতগামী যাত্রীরা। প্রবা ফটো
যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন ইমিগ্রেশন দিয়ে কথিত লাগেজ পার্টি বা চোরা কারবারিরা নির্বিঘ্নে পার হয়ে যাচ্ছে। একশ্রেণির অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা ও বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করে তারা বিভিন্ন অবৈধ মালামাল নিয়ে পারাপার হচ্ছে বলে অভিযোগ। আর হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ ভ্রমণপিপাসু ও চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসা যাত্রী। তাদেরকে কারণে-অকারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। টাকা ছাড়া ব্যাগ-ব্যাগেজ ছাড়া হয় না।
সম্প্রতি বেনাপোল রেলস্টেশনে দেখা যায়, ট্রেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশনে থাকা দালাল বাবু, অসীমসহ বেশ কয়েকজন কুলির সহযোগিতায় কাস্টমস কর্মকর্তা ও বিজিবিদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে পার হচ্ছে লাগেজ পার্টি। অথচ ভ্রমণ করা ও মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া রোগীরা কাস্টমস ও বিজিবি সদস্যদের দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসা রফিকুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী বলেন, ‘ফেরার পথে পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি। কিন্তু বেনাপোল রেলস্টেশনে নেমে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে কাস্টমসের ভেতরে ঢুকলেই ব্যাগগুলো খুলে মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করে ফেলেন। পাঁচটা শাড়ি, কিছু কসমেটিকস ও বাচ্চাদের চকলেট ছিল। তারা শাড়িগুলো নামিয়ে রাখেন। প্রতিবাদ করলে ধমক দেন। তাদের সঙ্গে থাকা এক দালাল ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে অনেক কাকুতি মিনতি করে ৪ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অথচ আমাদের সামনে একেকজন ৪ থেকে ৫টি লাগেজ নিয়ে নির্বিঘ্নে পার হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে কোনোরকম আটকাচ্ছেন না কাস্টমস কর্মকর্তারা। এমনকি বিজিবি সদস্যরাও চুপচাপ থাকেন। পরে দালালদের মাধ্যমে জানতে পারি চ্যানেলের মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত ভারত থেকে মালামাল এনে বাংলাদেশে বিক্রি করে। তাই তাদেরকে কিছু বলা হয় না। অথচ কোনো সাধারণ যাত্রীকে ফেরার সময় নানাভাবে হয়রানি করা হয়।’
ভ্রমণ ভিসায় ফিরে আসা জিসান নামে আরেকজন বলেন, ‘প্রতি বছর এক থেকে দুবার ভারতে ঘুরতে যাই। ঘোরার সময় যেখানে যেটা পছন্দ হয় টুকটাক করে কেনাকাটা করি। সেগুলো নিয়ে ফেরার সময় ইমিগ্রেশনে এলেই দালালরা আমাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতার কথা বলেন। তাদের কথায় রাজি না হলে অফিসারদের দিয়ে হয়রানি করেন। আমাদের এমন কোনো মালামাল নেই যে, দালালদের শরণাপন্ন হয়ে ঘুষ দিতে হবে। ব্যাগগুলো কাস্টমসের ভেতর খুলে টানাহেঁচড়া করে মালগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়। অথচ সামনে দিয়েই লাখ লাখ টাকার মাল নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে লাগেজ পার্টি বা চোরা কারবারিরা। এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার।’
রেলস্টেশন ইমিগ্রেশন কাস্টমসের সুপার আবু তাহেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিককে ফাঁকি দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আবু তাহেরকে স্যার না বলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
জানতে চাইলে বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোনটা ছাড়তে হবে আর কোনটা ছাড়তে হবে না, সেটা বিজিবির এখতিয়ার। এ সম্পর্কে আমরাই ভালো জানি।’