কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনা
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৩ পিএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:২১ পিএম
কুমিল্লার বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনায় বিয়ারিং প্লেট খুলে নিয়েছিল দুষ্কৃতিকারীরা। দুর্ঘটনার ২৫ মিনিট আগে রেলকর্মীরা বিষয়টি জানলেও ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। এ ছাড়া পতাকা উড়িয়ে ট্রেন থামানোর সুযোগ থাকলেও সেটি করেননি রেল ট্র্যাকে কর্মরত রেলকর্মীরা। এতেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন। রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলামকে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) মো. শহীদুল ইসলাম। এরপর পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক প্রতিবেদনটি অনুমোদন করেন।
এই রেল দুর্ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলায় দায়ী রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্কস ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রকৌশল বিভাগের সব কর্মকর্তাকে রেলপথ পরিদর্শন করে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা, রেলপথের যে কোন ত্রুটির সংবাদ পেলে সেটি না এড়ানো, ত্রুটির সংবাদ পেলে প্রথমে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাগ্রহণ এবং রেলপথ/সেতুর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরির প্রবণতা বৃদ্ধির পাওয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অধিকতর তৎপর হওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, রেললাইনের বিয়ারিং প্লেট (স্লিপার সংযুক্ত করার পাত) চুরি এবং রেল সেতুর অকেজো স্লিপারের কারণে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। প্রতিবেদনে দায়িত্ব অবহেলার কারণে তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৭ মার্চ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজেরবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এরপর সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হতে তিনদিন সময় লেগে যায়। এমনকি এই ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে পূর্বাঞ্চলের ২৫টি ট্রেনের শিডিউল মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং বেশ কয়েক জোড়া ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়।
এই দুর্ঘটনার পরদিন রেলওয়ের ঊর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে লাকসাম রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। পরদিন (১৯ মার্চ) এই ট্রেন দুর্ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চার কিশোরকে হেফাজতে নেয়। পরে তাদের গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর রেলওয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। একটি তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস মো. শহিদুল ইসলামকে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটির প্রধান করা হয় বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনিসুর রহমানকে। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়া হয়নি।