সিজারে প্রসূতির মৃত্যু
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৪ পিএম
মায়ের জন্য কান্না করছে শিশু ইকরা। প্রবা ফটো
‘ওরা আমার মারে মাইরা ফেলছে। মায়ের লগে একটু কথা কইবারও দিছে না। মা আমার লগে একটু কথা কইতে চাইছিল। তারা মাকে, আমার লগে একটুও কথা কইতে দিছে না।’ এভাবেই কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ১০ বছর বয়সি শিশু ইকরা।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তায় লাইফ কেয়ার হাসপাতালে শিশুটির মা ইয়াসমিন আক্তার সিজার অপারেশন করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। ইয়াসমিন আক্তার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামের আসাদুল্লাহর স্ত্রী।
নিহত ইয়াসমিনের স্বামী আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে মাওনা চৌরাস্তা লাইফ কেয়ার হাসপাতালে সিজার করাতে নিয়ে আসি। যখন হাসপাতালে এনেছিলাম তখন সে সুস্থ ছিল। অপারেশন কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালের লোকজন আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে। তারা কিছু জানায়নি। শুধু বলছে অতিরিক্ত রক্ত বের হচ্ছে। আমরা বাইরে থেকে দেখতেছি, তারা দুই মিনিট পর পর মেডিসিন আনছে। শুনছি, অতিরিক্ত রক্ত গেছে। রক্ত যাওয়ার কারণে মারা গেছে। তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তারা আমার স্ত্রীকে মাইরা ফেলছে।’
ইয়াসমিনের মা রাজিয়া আক্তার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মাগরিবের নামাজের পরপরই সিজার করা হবে। এই বলে হাসপাতাল থেকে স্বজনদের বিদায় দেয়। শুধু আমি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষায় ছিলাম। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে জানানো হয়, মেয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে। দৌঁড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে দেখেন প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তখন স্বজনদের খবর দিলে তারা হাসপাতালে ছুটে আসেন। তারা এসে চিকিৎসককে অনুরোধ করলেও কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে তারা রেফার্ডের নাম করে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ তুলে দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।
লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) পারভেজ হোসেনের ফোন নম্বরে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন পন্ডিত জানান, অপারেশনের পর ইয়াসমিন মারা গেলে উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ভাঙচুর করে। আমি এখনও ঘটনাস্থলে আছি। তদন্তে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’
খবর পেয়ে গভীর রাতে হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ইউএনও উপস্থিত সবার সঙ্গে কথা বলে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, ‘এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি হাসপাতালের বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও প্রশাসনের কর্মকর্তার সমন্বয়ে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’