রিকোর্স চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৬ এএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৬ পিএম
রাঙামাটির বনরূপা বাজারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে নানা ডিজাইনের পিনোন-হাদি। বিক্রি করছেন পাহাড়ি নারী বিক্রেতারা। প্রবা ফটো
‘চিবিদ গাছের ছায়ার পিনোন্,/অঙ্গে জড়িয়ে/পাঁচ পাহাড়ের খাদের নিচে/যাচ্ছি গড়িয়ে’- পিনোন যে পাহাড়িদের মধ্যে কত জনপ্রিয়, আল মাহমুদের এই ছড়া থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১ ভাষাভাষী ১৪টি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার নারীদের প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক এই ‘পিনোন-হাদি’। এই পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের সম্প্রদায়গত পরিচয়। চাকমাদের মধ্যে পাহাড়ি নারীদের এই পোশাক পরিচিত ‘পিনোন-হাদি’ নামে। ত্রিপুরাদের কাছে এর পরিচয় ‘রিনাই-রিসা’। আর মারমারা একে বলে থাকে ‘থুবুইং’ নামে।
ছোট-বড় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পাহাড়ের প্রধান উৎসব বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, বিহু (বৈসাবি) উপলক্ষে পাহাড়ি নারীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে এই পিনোন-হাদি। রাঙামাটি শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা বনরূপা বাজারে এই পোশাকের জমজমাট বাজার বসে সপ্তাহের দুই দিন- শনি আর বুধবার। নানা ডিজাইনের পিনোন-হাদি নিয়ে খুব ভোরেই দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা চলে আসেন।
তবে এখন এই পোশাকের চাহিদা শুধু পার্বত্য এলাকায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম ও ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও। জীবন-জীবিকার জন্যে পিনোন-হাদি বুননকেই বেছে নিচ্ছেন এখন অনেক পাহাড়ি নারী।
সরেজমিন : বনরূপা বাজার
সম্প্রতি রাঙামাটির বনরূপা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে নানা ডিজাইনের পিনোন-হাদি। সেগুলো বিক্রি করছেন পাহাড়ি নারী বিক্রেতারা। এক জোড়া পিনোন-হাদি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকায়।
এ প্রসঙ্গে বিক্রেতা আলো রানী চাকমা বলেন, ‘এখানে আমাদের সপ্তাহে দুই দিন পিনোন-হাদির বাজার বসে। সামনে বিজুর উৎসব আছে। তাই পিনোনের চাহিদাও বেড়েছে। একেকটা পিনোনের দাম নির্ধারণ করা হয় সেটির মানের ওপর। সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকায় পিনোন বিক্রি করি আমরা। তবে চার হাজার ও সাড়ে চার হাজার টাকা দামের পিনোনও রয়েছে। কাস্টমাররা যে দামে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সে দামেই কিনতে পারেন।’
নিরালা চাকমা বলেন, গ্রামে কারিগরের কাছ থেকে কিনে আমরা এখানে খোলা বাজারে সপ্তাহে শনি ও বুধবার পিনোন হাদি বিক্রি করি। ভালো বিক্রি হয়। অনেকে আমাদের থেকে পাইকারি দরে কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বিদেশেও নিয়ে যায়।
বিদেশেও যাচ্ছে পিনোন
কল্পনা চাকমা বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনোন-হাদি দেশেবিদেশে অনেক জায়গায়ই পাইকারি কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। ব্যবসার পাশাপাশি আমরা আমাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখছি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক দেশে-বিদেশে যাচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। তবে এখানে ভালো বা সুবিধামতো বসার জায়গা নেই। তাই এসব বিক্রি করতে হয় খোলা বাজারে। আর ব্যবসা করতে তো অনেক টাকারও দরকার। কিন্তু সে রকম কোনো সহযোগিতা বা কোনো ঋণ আমরা পাই না। নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে আমরা ব্যবসাটা চালিয়ে যাচ্ছি।’
উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা বলেন, ‘যারা পিনোন-হাদি বিক্রির সঙ্গে জড়িত তারা যদি নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বসে সেটা বিক্রি করতে পারে, তাহলে পর্যটক বা ক্রেতারা খুব সহজে এটা সংগ্রহ করতে পারবে বলে আমি মনে করি।’
বিসিক রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। তাই যন্ত্রপাতি ফ্রি বিতরণ ও বিনা সুদে ঋণ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের লোনের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকে সুপারিশ করতে পারি। আমাদের যে ঋণের কার্যক্রম আছে সেটি খুব সীমিত।’