নারায়ণগঞ্জ (শহর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৪ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২২:১২ পিএম
মা হাসনা বানু ও জমি লিখে নেওয়া ছেলে আলমগীর। প্রবা ফটো
ভাগ্যবিড়ম্বিত এক মা হাসনা বানু। বয়স ৭০। যে বয়সে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জীবনযাপনের কথা, সেই বয়সে তার ওপর নেমে এসেছে অবজ্ঞা-অবহেলা আর নির্যাতনের খড়গ। কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ছেলেমেয়েরা। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে তাকে। এমন ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায়।
হাসনা বানু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তার স্বামী আলাল মাদবর আট বছর আগে মারা গেছেন। স্বামী ও প্রবাসী বড় ছেলে মনির হোসেনের টাকায় ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন হাসনা বানু, যার দাম বর্তমানে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। বাবার মৃত্যুর পরে ছেলেমেয়েরা পুরো জমিটি লিখে দেন মা হাসনা বানুকে। পরে নিরক্ষর মাকে ভুল বুঝিয়ে ও ছলচাতুরি করে বড় ছেলে মনির হোসেনকে বাদ দিয়ে জমিটি লিখে নেন অপর চার সন্তান।
হাসনা বানু বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত। লেখাপড়া করি নাই বাবা। আমার অন্য সন্তানরা এত চালাক না। তাই আলমগীর সব অপকর্ম করেছে। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাইরে নিয়ে আমার কাছ থেকে দলিলে সই নেয় আলমগীর। আলমগীর দলিল লেখক। আমার ভাইয়ের কাছে দলিল লিখনের কাজ শিখেছে। আমার ভাইয়ের কাছে কাজ শিখে আমাকেই নিঃস্ব করে পথের ফকির বানাল আমার ছেলে।’
কিছু দিন আগে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আলমগীরের কাছে জমি ফেরত চান হাসনা বানু। এরপর থেকে মাকে মারধর শুরু করেন আলমগীর ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন হাসনা বানু। সন্তানদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় পুলিশ। খবর পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালান আসামিরা। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মাকে ব্যাপক মারধর করেন আলমগীর ও তার স্ত্রী। একই সঙ্গে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাকে। এ সময় প্রবাসী সন্তান মনির হোসেনের স্ত্রী বৃদ্ধা শাশুড়িকে আশ্রয় দেন। এতে আলমগীর ক্ষিপ্ত হয়ে মনির হোসেনের স্ত্রী ও হাসনা বানুকে আবারও মারধর করেন। অবশেষে জীবন বাঁচাতে ছেলের বউকে সঙ্গে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেন হাসনা বানু। নিজের মায়ের সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে লিখে নেওয়া ও মাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় এলাকাবাসী। তারা দ্রুত প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আলমগীরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জমি ফেরত দিয়ে দেব।’ এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, অপরাধী যে-ই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। বৃদ্ধা মায়ের সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’