কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৪:১১ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩৩ পিএম
মায়ের সঙ্গে শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ। প্রবা ফটো
অপহরণ আর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েই প্রবাসীর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে নেন রোহিঙ্গা উম্মে সালমা। আর সেই সূত্র ধরেই ৯ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহরণ করা হয় ৬ বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে। অপহরণের ২২ দিনের মাথায় শনিবার (৩০ মার্চ) কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। রবিবার তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রা.) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে টেকনাফ থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অপহরণের বিস্তারিত বর্ণনা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি। সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির মা নুরজাহান বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় কয়েক দফায় গ্রেপ্তার ১৭ জন হলেন, টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগু ডাকাত ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম, তাদের ছেলে আনোয়ার সাদেক ও তার স্ত্রী হোসনে আরা, নাগু ডাকাতের আরেক ছেলে রনি, নাগু ডাকাতের ভাই মোহাম্মদ হাশেম, খাতিজাতুল খোবরা, লায়লা বেগম, উম্মে সালমা, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিরপাড়ায় বসবাসকারী পুরোনো রোহিঙ্গা নাসির আলম, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাইস্যাঘোনা এলাকার সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া, একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার জহির আহমেদ, হাসমুল করিম তোহা, সামিরাঘোনা এলাকার মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, ফরিদুল আলম খান, আমির হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম তোহা।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল জানান, আনোয়ার সাদেকই মূলত এই অপহরণ চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করে আসছে। পরিবারে সদস্য ও আত্মীয়দের নিয়ে গঠিত অপহরণ চক্রের প্রদান সাদেকের পরিকল্পনায় উম্মে সালমা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিল। যেখানে কিছু দিন কাজ করার পর ছেলে ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় এবং সখ্যতা তৈরি করে। এর কিছু দিন পর উম্মে সালমা চলে গিয়ে অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
তিনি আরও জানান, গত ৯ মার্চ দুপুরে ক্লাস শেষে মাদ্রাসায় ফেরার পথে মায়ের দুর্ঘটনা ও হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে ছোয়াদকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করেন উম্মে সালমা। ওইদিন সন্ধ্যায় ওই শিশুর মা নুরজাহান বেগম অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অটোরিকশা চালকের স্বীকারোক্তি মতে গত ১২ মার্চ টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রের উম্মে সালমাসহ আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এই ৫ জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই অপহরণের পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল।
ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, এরপর থেকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখে। অভিযানে এক-একজনকে গ্রেপ্তারের পর আরও তথ্য আসতে শুরু করে। এর মধ্যে শিশুর মা নুরজাহান বেগমকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এমনকি মুক্তিপণ না দিলে শিশুটি হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহৃত শিশুকে বিভিন্ন সময় নির্মমভাবে মারধর করে কান্নাকাটির শব্দ শোনায়। ফলে পুলিশ অভিযানের পাশাপাশি নানা কৌশলে এগিয়ে যেতে থাকে। অপহরণ চক্রের সদস্যরা শিশুটি নিয়ে একের পর এক স্থান পরিবর্তন শুরু করে।
ওসি জানান, টেকনাফ থেকে অপহরণের পর শিশুটিকে ঈদগাহ এলাকায় রাখা হয়। ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার গহীন পাহাড়ে। যেখানে পুলিশ অভিযান টের পেয়ে শিশুটি নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। এর মধ্যে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা প্রদানের কৌশলে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এসয় মুক্তিপণের ৪ টাকা ফেরত আনা ছাড়াও অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।
তিনি বলেন, আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদ্যস্যরা অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত অপহরণ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
২২ দিন পর শিশুকে ফেরত পেয়ে অপহৃত শিশুর মা নুরজাহান বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, অপহরণ যেকোনোভাবেই বন্ধ হওয়া জরুরি। পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।