গাজীপুরের কালিয়াকৈর
আবু সাঈদ, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৫ পিএম
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার (এলপিজি) ছড়িয়ে রয়েছে। প্রবা ফটো
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার (এলপিজি) ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। সঠিক তদারকি ও পর্যবেক্ষণের অভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে। কালিয়াকৈরে মুদি দোকান, সেলুন, স্যানেটারি দোকান, সবজির দোকান, ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে লেপ-তোষকের দোকানেও খুচরা মূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলির দোকানগুলোতে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে, যা থেকে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলপিজি ডিলার পয়েন্ট, পাইকারি এলপিজি বিক্রির দোকান ও খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদিত এলপিজি ডিলাররা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অগ্নি-নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা পরিচালনা করলেও খুচরা ও পাইকারি গ্যাস সিলিন্ডারের কোনো দোকানদারই বিস্ফোরক লাইসেন্স তো দূরের কথা, কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই দেখাতে পারেনি।
সম্প্রতি উপজেলার তেলিরচালা টপস্টার এলাকায় নিম্নমানের একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৩৬ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে প্রতিদিন দগ্ধদের কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। চিকিৎসাধীন অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এত বড় দুর্ঘটনা, এতগুলো প্রাণহানির ঘটনার পরেও বিস্ফোরিত এলাকায় সিলিন্ডারে লাগা আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়া বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ ও যেখানে-সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনা বন্ধের বিষয়ে তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি।
উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার, পূর্ব চান্দুরা, ডাইনক্লিন, চন্দ্রা, মাঝুখান ও মৌচাক এলাকায় ১২-১৩ জন গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাঝুখান গ্রামের সাইফুল, কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় সমীর কুমার সাহা, বিপ্লব চন্দ্র সাহা, অসীম বাবু, ভৈরব সাহা, রনি সাহা, ডাইনক্লিন এলাকার আব্দুস সালাম, চন্দ্রা এলাকায় মুন্নাফ মিয়া, মৌচাক শিল্প এলাকায় বাবুল হোসেন, কবির হোসেন, রাসেল মিয়া, শামীম হোসেনের গুদামে হাজার হাজার গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার থাকা সত্ত্বেও গুটি কয়েকজনের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স রয়েছে, তাও আবার ৫০০-১৫০০ কেজি জ্বালানি ধারণক্ষমতার। অনেকের আবার লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। লাইসেন্সধারী গুটি কয়েকজনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে, তাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ।
এ ছাড়া উপজেলার কালিয়াকৈর বাজার, বাড়ইপাড়া, সফিপুর, মৌচাক, তেলিরচালা, ভান্নারা বাজারসহ উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই পাইকারি ও খুচরা গ্যাস সিলিন্ডারের বিপুল সংখ্যক দোকান থাকলেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেখাতে পারেননি কোনো দোকানি। তা ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
প্রাণহানির মতো মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আবার মানহীন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারও মজুদ করতে দেখা গেছে বিভিন্ন ডিলার, পাইকারি ও খুচরা দোকানিদের। এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওসার আহমেদ বলেন, তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বৈধ-অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের সকল ব্যবসায়ীর তালিকা ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে। যাদের সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র নেই, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এলপি গ্যাসের ব্যবসা করতে হলে ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে। আমরা অবৈধ ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করছি।