× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৫০ বছর পর দেখা মা-মেয়ের, কথা হয় ইশারায়

শিব শংকর রবিদাস, শিবচর

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৪ এএম

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২২:৪৪ পিএম

৫০ বছর পর মৌসুমি মায়ের কাছে ফিরলেন এলিজাবেথ ফিরোজা হয়ে। মা-মেয়ের সাক্ষাৎকারে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। বৃহস্পতিবার শিবচরের মাদবরচরে। প্রবা ফটো।

৫০ বছর পর মৌসুমি মায়ের কাছে ফিরলেন এলিজাবেথ ফিরোজা হয়ে। মা-মেয়ের সাক্ষাৎকারে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। বৃহস্পতিবার শিবচরের মাদবরচরে। প্রবা ফটো।

৫০ বছর পর মায়ের দেখা পেলেন নরওয়েতে বেড়ে ওঠা এলিজাবেথ ফিরোজা। অর্ধ শতাব্দী পর মা ও মেয়ে একত্রে হওয়ায় আনন্দের কান্নায় আত্মহারা হয়ে পড়েন দুজনেই। কেউ কারও কথা বোঝেন না, কিন্তু ইশারায় চলে তাদের আবেগের ভাব বিনিময়। মেয়েকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ ) সকালে মাদারীপুরের শিবচরে আসেন এলিজাবেথ ফিরোজা। সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী হ্যানরি। শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামে তার বংশের একমাত্র ভাতিজা সেলিম সরদারের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে আসেন তারা।  

জানা যায়, ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে ঢাকায় খুন হন ফিরোজা বেগমের স্বামী বছির সরকার। তখন ফিরোজা বেগম ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। একই বছরের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ সকালে ফিরোজা বেগম তার এক ননদের বাসায় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন মৌসুমী। ১৩ বছরের ফিরোজা বেগম এক নবজাতকের মা হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। নবজাতক সন্তানকে কী করে বড় করবেন সে চিন্তায় তিনি পাগলপ্রায়। তখন এক প্রতিবেশীর পরামর্শে ১৯৭৫ সালে ৩০ আগস্ট ঢাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশুসদনে দেড় মাস বয়সি শিশুকে বিনা শর্তে দিয়ে যান ফিরোজা বেগম।

সেই বছরের ১৭ জুলাই নরওয়ের নাগরিক ডাক্তার রয় রয়েড আর তার স্ত্রী ক্যারেন রয়েড বাংলাদেশ সরকারের আন্তঃদেশীয় দত্তক প্রকল্পের মাধ্যমে চার মাস বয়সি মৌসুমীকে দত্তক নেন। তার নতুন নাম হয় এলিজাবেথ ফিরোজা।

চিকিৎসক রয় রয়েড আর গৃহিণী মা ক্যারেন এলিজাবেথের কাছে যত্নে বড় হতে থাকেন এলিজাবেথ। সেখানে ১০ বছর বয়সে এলিজাবেথ জানতে পারেন তার জন্ম বাংলাদেশে।

স্বাস্থ্যকর্মী এলিজাবেথ ঘর বাঁধেন সমাজকর্মী হেনরির সঙ্গে। ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান জন্মের আগে ডাক্তার জানতে চান এলিজাবেথের বাবা-মায়ের কোনো অসুখ ছিল কি না। জানতে চান পরিবারের পুরো ইতিহাস। তখন এলিজাবেথ তার মাকে খুঁজে বের করার পরিকল্পনা নেন।

গত ২৩ মার্চ এলিজাবেথ ফিরোজা আসেন বাংলাদেশে। এরই মধ্যে যোগাযোগ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরে। সেখান থেকে জানতে পারেন তার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরের মাধবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামে। খুঁজে পান ভাতিজা সেলিম সরদারকে। তার কাছে জানতে পারেন তার মা ফিরোজা বেগম বেঁচে আছেন।

স্বামী বছিরের মৃত্যুর পর ফিরোজা বেগম আরেকজনকে বিয়ে করেন। বর্তমানে সেই স্বামীর বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় বসবাস করেন। হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ফিরে আসার খবরে বৃহস্পতিবার সকালে ৬৩ বছর বয়সি ফিরোজা বেগম ছুটে আসেন পোদ্দারচর গ্রামে সেলিম সরদারের বাড়িতে। এরপর এক অন্যরকম দৃশ্য। মা-মেয়ের দেখাকালে উভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। কেউ কারও কথা বোঝেন না, কিন্তু ইশারায় চলে ভাব বিনিময়।

সেখানে থেকে মা ও মেয়ে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা গ্রামে যান। এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য আনা নতুন জামা-পায়জামা, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন উপহার তুলে দেন মায়ের হাতে। নিজের গলার দামি একটি চেইনও নিজ হাতে মায়ের গলায় পরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ আটা, ময়দা, সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান মাকে। দিনভর মা ও মেয়ে একসঙ্গে সময় কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ ফিরোজা।

এলিজাবেথের ভাতিজা সেলিম সর্দার বলেন, ‘আমরা কোনো দিন জানতামও না যে আমার দাদি বেঁচে আছেন। এমনকি সে তার মেয়েকে শিশুসদনে রেখে এসেছিল। ঢাকা থেকে তারা যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দাদি তার পরের স্বামীর বাড়ি নাওডোবা এলাকায় এখনও বেঁচে আছেন। তাই তাকে আমাদের বাড়িতে আনার পর আমার হারিয়ে যাওয়া ফুফু এলিজাবেথ ফিরোজা আসেন। এত বছর পর মা ও মেয়ের দেখা যখন হলো তখন তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমাদের চোখেও তখন জল নেমে আসে। তবে খুবই ভালো লাগছে।’

ফিরোজা বেগম জানান, মৌসুমীর জন্মের পর তার ভরণপোষণ করাটা ছিল আমার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। আত্মীয়স্বজন অনেকের বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। কোনো কূলকিনারা পাইনি। কিন্তু কোলের মানিক রাস্তায় ফেলে আসিনি। এক প্রতিবেশীর পরামর্শে শিশু মৌসুমীকে সরকারি শিশুসদনে রেখে আসি। সেই কোলের মানিক ৫০ বছর পর আবার আমার কোলে ফিরে আসবে এটা আমি ভাবিনি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করছি।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এলিজাবেথ ফিরোজা বলেন, ‘নরওয়ের বাবা-মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারপর থেকেই আমি ফিরাজো নামটাকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। বিয়ের পর ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর নরওয়েরে চিকিৎসক আমার হিস্টোরি (ইতিহাস) জানতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে আমার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সেখানে আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে এবং নাতি-নাতনিও রয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা