× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল যে বিলের পানি

জিআরএম শাহজাহান, (আদমদীঘি) বগুড়া

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩০ পিএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩৬ পিএম

 রক্তদহ বিল। ছবি: সংগৃহীত

রক্তদহ বিল। ছবি: সংগৃহীত

বিলের নাম রক্তদহ। কথিত আছে, ফকির মজনু শাহের সঙ্গে এখানে ইংরেজ সেনাদের যুদ্ধ হয়েছিল। ইংরেজদের সঙ্গে পলাশী-পরবর্তী যেসব যুদ্ধ হয়েছিল, এটি তার অন্যতম। যুদ্ধে হতাহতে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বিলের পানি। সেই থেকে বিলটির নাম রক্তদহ বিল। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই বিলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। 

বগুড়া জেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে, আদমদীঘি উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে রাণীনগরের পারইল ইউনিয়ন এবং আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে, নন্দীগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত এই বিলের অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই বিলের পূর্বের নাম ছিল ভোমরা। ১৭৭৬ সালে ফকির মজনু শাহের সঙ্গে ইংরেজ সৈন্যদের যুদ্ধের পর বিলটির নতুন নামকরণ করে রাখা হয় রক্তদহ বিল।

বিলটি দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম বৃহৎ। ১৩টি খাল ও অন্যান্য জলপথ রক্তদহ বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূল বিলটি ২৫০ দশমিক ৪৭ একর এবং এর ব্যাপ্তি প্রায় ৫২ কিলোমিটার। তবে রক্তদহ বিলের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। এই ইতিহাস তেমন আলোচনায় আসেনি। 

 বগুড়ার মহাস্থানগড়ে মজনু শাহ প্রধান ঘাঁটি গড়ে তোলেন। ১৭৭৬ সালে বিভিন্ন স্থানে তিনি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। যে দুর্গ থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করতেন মজনু শাহ। তার মধ্যে এই রক্তদহ বিলের অভিযান অন্যতম। ১৭৮৬ সালের আগস্ট মাসে যেখানে বর্তমান মূল রক্তদহ বিল, সেখানে মজনু শাহের বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজ লেফটেন্যান্ট ‘আইন শাইন’র বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছিল। প্রথমে সেই জায়গা সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। পরবর্তীতে জানা যায়, এই স্থানটি আদমদীঘি থানার দক্ষিণে রক্তদহ বিল। এই যুদ্ধে অসংখ্য ইংরেজ ও মজনু শাহ্ ফকিরের সৈন্য নিহত হয়। প্রথমে ইংরেজ সমর্থিত হিন্দু জমিদারদের অনুসারীরা এটাকে নাম দেয় ‘ফকির কাটার বিল’। আর সাধারণ মানুষেরা ইংরেজ বা জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল, সেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষের মানুষগুলো এ বিলের নাম দেয় রক্তদহ। যা এখনও বিদ্যমান। 

ওই যুদ্ধে কোঁচ নামে একজন মুনি বা মহান ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ফকির মজনু শাহ তাকে বিলের মধ্যে সমাধিস্থ করেন। বর্তমানে সেখানে অশত্থ ও বটগাছের দ্বারা ছায়াশীতল একটি মাজার রয়েছে। এই রক্তদহ বিলের মাজারটি স্থানীয়ভাবে রক্তদহ দরগা বা কোঁচমুনির দরগা নামে পরিচিত। কথিত আছে, অনেক বড় বন্যাতে চারপাশ ডুবে গেলেও কোঁচমুনির মাজারের স্থানটি ভাসতে থাকে। প্রতি শুক্রবার এখানে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ আসে। রোগ-বালাই কিংবা বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে মান্নত করে, সিন্নি দেয়। এ ছাড়া প্রতি বছর বর্ষাকালে এই বিলে পরিবার-পরিজনসহ নৌকা ভ্রমণ ও বনভোজনের ধুম পড়ে যায়। 

কয়েক পথে যাওয়া যায় এই বিলে। বগুড়ার আদমদীঘি বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে কিংবা অটোরিকশায় চেপে গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া যায় এই বিলে। দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।

আর সান্তাহার রেলগেট থেকে অটোরিকশায় সহজেই চলে আসতে পারেন রক্তদহ বিলে। দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। ভাড়াও পড়বে খুবই কম। এখান থেকে ১৫০ টাকায় রিজার্ভ রিকশায় ঘুরে আসা যায়। এখানে রয়েছে প্রচুর গাছপালা। যেতে যেতে দেখা যাবে সারি সারি খেজুর, তালসহ অজস্র গাছগাছালিসহ সবুজের সমারোহ।

রক্তদহ বিলে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। যা দিয়ে বগুড়া ও নওগাঁ জেলার অধিকাংশ মাছের চাহিদা পূরণ হতো। বিলের বোয়াল, চিতল, আইর, শোল, গজার, মাগুর, শিং, পাবদা ও টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ছোট মাছের সুখ্যাতি রয়েছে। এ বিলের মাছের স্বাদের আলাদা সুনাম থাকায় এখানকার মাছের কদরও বেশি। এখন বর্ষাকাল ছাড়া সারা বছরই বিলের সিংহভাগ জায়গায় পানি থাকে না। ফলে বিলটিতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তা ছাড়া সকল পার্শ্ব থেকেই ভরাটের কারণে দিন দিন বিলের আয়তনও কমে যাচ্ছে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার জনপ্রতিনিধিরা বছর বছর বিল সংস্কারের নামে চাল-গম, টাকা-পয়সা বরাদ্দ পেলেও তার সিংহভাগ নিজেরাই হজম করে ফেলে। সরকারি অর্থায়নে সত্যিকারভাবে বিলটির সংস্কার করা হলে এটি যেমন মৎস্যভাণ্ডারে পরিপূর্ণ হবে তেমনি রক্তদহ বিল হয়ে উঠবে একটি পর্যটন কেন্দ্র।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা