সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৫৫ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৫৭ পিএম
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদী কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জ শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে এককালের খরস্রোতা নরসুন্দা নদী। ২০১৬ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশে শোভাবর্ধনের কাজ করা হয়। এ শোভাবর্ধন প্রকল্পের আওতায় গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন নদী পারের এলাকায় মুক্তমঞ্চসহ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়। এলাকাটি দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়। এখন নরসুন্দা নদীতে কচুরিপানার স্তূপে মশার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধে সেখানে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শহরের মানুষের আড্ডা ও বিনোদনের কোনো স্থান না থাকায় নরসুন্দা নদীর গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ও আখড়া বাজার ব্রিজের দৃষ্টিনন্দন অংশটি একমাত্র বিনোদন স্পট। প্রতিদিন বিকালে হাজার মানুষের পদচারণায় ভাসমান মুক্তমঞ্চ মুখরিত হয়ে ওঠে। এ ছাড়া পার্কের গোলাকার বসার স্থান, ঘাট বাঁধানো পুকুর, একাধিক সিঁড়ি নির্মিত ঘাট ও ওয়াচ টাওয়ার আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি শোভাবর্ধন প্রকল্পে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক বিভিন্ন আইটেমের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। ফলে মানুষ নির্বিঘ্নে ও সহজে মুক্তমঞ্চ এলাকায় চলাচল করতে পারে। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করে সময় কাটাতে পারেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার হাজার হাজার মানুষের পদচারণা ও আড্ডায় নরসুন্দা ওই স্থানটি জমজমাট হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে নরসুন্দা নদী কচুরিপানায় ভরে গেছে। কচুরিপানার স্তূপ মশার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। আবার রাতের আঁধারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কাচারি বাজারের বর্জ্য ফেলে নদীটিকে দূষিত করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে নদীর অবস্থা এখন শোচনীয়। কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনার তীব্র গন্ধ আর মশার উপদ্রবে নরসুন্দার দৃষ্টিনন্দন পাড়ে বসা কঠিন হয়ে পড়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। দুর্গন্ধে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
শোভাবর্ধন প্রকল্পের নদী পাড়ঘেঁষা ওয়াকওয়েতে সকাল-বিকাল শত শত মানুষ হাঁটে। কিন্তু নরসুন্দার স্রোতহীন পানি ও কচুরিপানার গন্ধ পথচারীদের স্বপ্নিল মনকে বিষাদে ভরে দিচ্ছে। তাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। এখানে প্রতিদিন হাঁটেন অ্যাডভোকেট অশোক সরকার। তিনি বলেন, নরসুন্দা নদীতে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনার গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। দ্রুত নরসুন্দার কচুরিপানা পরিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। না হয় সামনের দিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসুন্দা প্রকল্পের কাজ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আবার নরসুন্দার দেখভাল করে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি নরসুন্দা প্রকল্পের সমুদয় অংশের মালিকানা পৌরসভার। তাই কচুরিপানা পরিষ্কার নিয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, ‘কচুরিপানা পরিষ্কার করা দরকার। তবে কাজটি উপজেলা পরিষদের নয়।’ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘৯ বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। তাই কচুরিপানা পরিষ্কার করার বিষয়টি অধিদপ্তরের কাজ নয়।’
জানতে চাইলে পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, ‘সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেও পৌর মেয়র হিসেবে শহরবাসীর সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হয়। তাই সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশের স্বার্থে তহবিল জোগাড় করে খুব কম সময়ের মধ্যে কচুরিপানা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’