× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাকা মরিচে টুকটুকে লাল ফুলছড়ি হাট

রিপন আকন্দ, গাইবান্ধা

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৬ পিএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৯ পিএম

গাইবান্ধার ফুলছড়ির শুকনো মরিচের হাটের চিত্র। প্রবা ফটো

গাইবান্ধার ফুলছড়ির শুকনো মরিচের হাটের চিত্র। প্রবা ফটো

লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো পুরো হাট। সূর্য ওঠার পর থেকেই হাটে আসতে শুরু করে মরিচ। নৌকা ও ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশীগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যস্ততা। ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার দরদাম মিটলে তা তোলা হচ্ছে বড় বড় দাড়িপাল্লায়। সেখান থেকে বস্তাবোঝাই হয়ে তা উঠছে ট্রাক ও ভটভটির ওপর। চলে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে।

এটি গাইবান্ধার ফুলছড়ির শুকনো মরিচের হাটের চিত্র। এ উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ায় জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে এখানে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র-সংলগ্ন হাটে বিভিন্ন চর থেকে আসা মরিচ নিয়ে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে এই হাট। এ অঞ্চলে ফুলছড়ি হাট মরিচের বাজার হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ।

লছড়ি মরিচ হাট নামে পরিচিত এই হাট এখন লাল মরিচে রঙিন হয়ে উঠেছে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন।

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, বিঘাপ্রতি কাঁচা মরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচা মরিচ জমিতে লাল রঙ হয়ে পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো শুকনা মরিচ হয়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য আরও খরচ হয় প্রায় হাজার দশেক টাকা। সে হিসেবে ১০ মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। খরচ বাদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয় তার।

মরিচ বিক্রেতা ফুলছড়ি গ্রামের মনসুর মিয়া বলেন, চরে মরিচ চাষ করে এই হাটে বিক্রি করতে আসি। শুধু আমি না এ হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন আমার মতো হাজারখানেক কৃষক। গাইবান্ধার লাল মরিচ বা শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলিমাটিতে বীজ ছিটিয়ে দুই থেকে তিনবার নিড়ানী দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয় মরিচের। মাটির গুণাগুণ এবং আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের মরিচের রঙ সুন্দর ও আকারে বড় হয়। এ কারণে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে আসেন। তবে বেশি মরিচ কেনেন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী নামিদামি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে এসেছেন জয়নাল ব্যাপারী। তিনি বলেন, ভোরবেলা ট্রাক নিয়ে এ হাটে মরিচ কিনতে এসেছি। ফুলছড়ির মরিচ ভালো মানের। প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ মণ মরিচ কিনে নিয়ে যাই। এরপর তা আমাদের স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করি।

জয়পুরহাট থেকে পাইকারি মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারী জুয়েল মিয়া বলেন, প্রতিবছরই এ হাট থেকে শুকনা মরিচ কিনে জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে থাকি। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিকেও সরবরাহ করি। এখানকার মরিচ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এই হাটে মরিচের মান ভালো। কিন্তু দাম কিছুটা চড়া।

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০৪ সাল থেকে এই মরিচের হাট বসে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়। অন্য সময়ে বিক্রি হয় কম।

ফুলছড়ি হাট ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা জানান, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুদিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। এবার প্রতিমণ মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন হাজার মণ শুকনো মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচ চাষে ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সবধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা