আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৪ পিএম
লবণাক্ততার কারণে ঝলসে গেছে সয়াবিনের গাছ। সম্প্রতি কমলনগর এলাকার চর কাঁকড়া এলাকা। প্রবা ফটো
সয়াল্যান্ড খ্যাত লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চরাঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঝলসে যাচ্ছে সয়াবিনের গাছ। এতে স্থানীয় কৃষকরা লোকসানে পড়ে সয়াবিন ও অন্য সবজির চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অনাবাদি পড়ে আছে দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার অধিকাংশ ফসলি জমি। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে অন্তত শতাধিক একর জমিতে রবি মৌসুমে কোনো শস্য আবাদ হয় না। এসব অনাবাদি জমির মাটি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ফসল না হওয়ার পেছনে লবণাক্ততার পাশাপাশি ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও তীব্র তাপমাত্রাকেও দুষছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল গ্রামের বিস্তীর্ণ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। সেসব জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে এলাকার ইটভাটাগুলোতে। সামান্য কিছু জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে চারা গজানোর হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মতো বলে জানান কৃষকরা। কচি চারা হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। ক্ষেতের আইল বা অনাবাদি জমির বিভিন্ন স্থানে সাদা সাদা লবণের চিহ্ন দেখা গেছে।
স্থানীয় আবুল খায়ের, সিরাজুল আলম ও মনির মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, বিগত ১০-১৫ বছর আগেও এসব জমিতে রবি মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনের চাষ হতো। তখন জমিতে লবণের পরিমাণ কম ছিল। ফলে এ অঞ্চলকে বলা হতো সয়াবিনের রাজধানী। লবণাক্ততার কারণে দিন দিন সয়াবিন, বাদাম ও মরিচের আবাদ কমে গেছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লবণের তীব্রতা এতই বেড়েছে যে, রবি মৌসুমেও তেমন ফসল হয় না। বেশিরভাগ কৃষক তাদের জমি খালি রাখেন। আবার যারা বীজ বপন করেন, শেষ পর্যন্ত ফলনও তুলতে পারেন না।’
একই মতামত উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক মো. সোলাইমান, আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজনের। তবে আমন মৌসুমে এ এলাকায় চাষ কিছুটা হয় বলে জানিয়েছেন তারা। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ত জমিতে পানির সরবাহ করা গেলেও কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অধিদপ্তর।
লবণাক্ততার কারণে ফসলের বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় চলে যাওয়ায় জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে এসব কৃষিজমিতে তেমন ফসল হয় না। এজন্য কৃষকরা জমি খালি রেখে দেয়। তবে কিছু জমিতে সয়াবিনের চাষ করা হলেও সেগুলোর অবস্থা তেমন ভালো নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম সালফেট প্রয়োগ করলে লবণের মাত্রা কিছুটা কমে যাবে। কৃষিজমির আশপাশে অনেকগুলো খাল রয়েছে। খালগুলো সংস্কার করে পানি আনার ব্যবস্থা করলে অনাবাদি জমি বোরো চাষাবাদের আওতায় আসত। জমিতে নিয়মিত পানি থাকলে লবণের তীব্রতা কমে যাবে। এতে ফসলও ভালো হবে।’
রামগতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক বলেন, ‘মাটির তলদেশে লবণাক্ত পানি থাকলে শুষ্ক মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি হলে জমিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে জমিতে যখন পানি থাকে বা জমি ভেজা থাকে, তখন লবণের মাত্রা কম থাকে। লবণাক্ত জমিতে চাষাবাদ কম হয়।’
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহিন রানা বলেন, ‘কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারলে অনাবাদি জমি চাষাবাদ করা যাবে। আমন ধান কাটার আগেই বিনাচাষে জমিতে সয়াবিন বীজ বপন করে দিতে পারে। তখন জমি শুকানোর আগেই সয়াবিন গাছ বড় হয়ে যাবে। গাছের পাতা গজালে সরাসরি মাটিতে রোদ কম পড়বে। এতে লবণের তীব্রতা কম দেখা দিবে।’ এ ছাড়া লবণাক্ত জমিতে বেশি পরিমাণে ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন এ কৃষি কর্মকর্তা।