এহসানুল হক সুমন, রংপুর
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪০ পিএম
ঘোড়ার গাড়িতে করে আলু পরিবহন করছেন চাষিরা। সম্প্রতি রংপুর নগরীর আজমখাঁ এলাকায়। প্রবা ফটো
গ্রামবাংলার একসময়ের ঐতিহ্যের বাহন ঘোড়ার গাড়ি। যান্ত্রিক যানবাহনের কারণে এ ঐতিহ্যবাহী যান হারানোর পথে। এখন গ্রামেও দেখা যায় না ঘোড়ার গাড়ি। তবে সম্প্রতি রংপুর নগরীর কিছু এলাকায় ঘোড়ার গাড়িতে করে আলু পরিবহন করতে দেখা গেছে। কাঁচা-পাকা সড়কে গাড়ি ভর্তি আলুর বস্তা নিয়ে ছুটে চলছে ঘোড়ার গাড়ি। আর এ বাহন দেখতে ভিড় করছেন গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা।
রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ, মহিন্দ্রা, বড়দরগা, অনন্তনগর, আজমখাঁ, মধুপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় আলু উত্তোলন প্রায় শেষের দিকে। কৃষক- শ্রমিকরা বাড়িতে কিংবা হিমাগারে আলু নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আলু ক্ষেতের নরম ও উঁচু-নিচু জমিতে রিকশা, ভ্যান কিংবা অটোরিকশা আসতে পারে না। তাই আলু পরিবহনে কৃষকের ভরসা ঘোড়ার গাড়িতেই। জমি থেকে আলু নিয়ে ঘোড়ার গাড়ি সারি করে এগিয়ে চলেছে কৃষকের বাড়িতে কিংবা পার্শ্ববর্তী হিমাগারে। আজমখাঁ এলাকায় আলু পরিবহন করছিলেন নাজির আহমেদ, শাওন, সাইফুল মমিনুরসহ ৮ ঘোড়াগাড়ি চালক। সবার বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর ঘরে। সবার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারীর মধ্যের চর বাড়ইটারী এলাকায়। গত ১৫ দিন ধরে ঘোড়ার গাড়িতে করে আলু পরিবহন করছেন তারা। প্রতি বছর আলু উত্তোলনের মৌসুমে ভুরুঙ্গামারী থেকে ট্রাকে করে ঘোড়ার গাড়ি এ এলাকায় নিয়ে আসেন। কৃষকের বাড়িতে থেকে ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে আলু পরিবহন করেন। প্রতিদিন একটি ঘোড়ার গাড়িতে ৮০ থেকে একশ বস্তা আলু পরিবহন করা যায়। দূরত্ব অনুযায়ী বস্তা প্রতি ২০ থেকে ৩৫ টাকা করে পান। এতে করে জনপ্রতি প্রতিদিন ষোলোশ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন তারা।
ঘোড়ার গাড়ি চালক নাজির আহমেদ বলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী এলাকার মানুষ হামরা। এমনি সময় চর এলাকাত বাদাম, ধান, ভুট্টা গাড়িত করি নিয়া যাই আসি। এই সমায় চরের চ্যায়া এই এলাকাত গাড়িত করি আলু উবাইলে (পরিবহন করলে) ভালো টাকা পাই। দেকা যায় ১৫ দিন কাম করি ২৫ থ্যাকি ৩০ হাজার টাকা বাড়িত নিয়া যাবার পরি।
মমিনুর রহমান বলেন, ক্ষ্যাতোত অন্য কোনো গাড়ি তো চলে না। তাই গৃহস্থরা হামাক প্রত্যেক বার ডাকে। হামরা আসিয়া কোনো গৃহস্থর বাড়িত থাকি। কাম শ্যাষোত আবার ট্রাকোত করি ঘোড়া আর গাড়ি এলাকাত ধরি যাই। ভালোই নাগে।
শাওন ইসলাম বলেন, ঘোড়ার গাড়ি অনেক ভালো। ত্যাল নাগে না, শব্দ নাই। ঘোড়ার গলাত ঝুনঝুনি থাকে। আস্তা (রাস্তা) দিয়া গাড়ি গেই ঝুনঝুনি থ্যাকি শব্দ হয়। এলাকার ছাওয়াগুলা গাড়ি দেকি অনেক মজা পায়। হামাকোও ভালো নাগে। কায়োক ঘোড়াক পাতা খাবার দেয়। হাত বোলে আদর করে।
মাহিগঞ্জ এলাকার শিক্ষক হাসেম আলী বলেন, আমরা ছোট বেলায় ঘোড়ার গাড়ি-গরুর গাড়ি দেখেছিলাম। এখন তো গ্রামেও এসব পরিবহন দেখা যায় না। তবে আমাদের এলাকায় প্রতি বছরই ঘোড়ার গাড়িতে করে আলু পরিবহন করে কৃষকরা। এতে কৃষকদের আলু পরিবহনে সহজ হয় এবং ঘোড়ার গাড়ি চালকদেরও ভালো আয় হয়। আমরা চাই গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্য যেন টিকে থাকে।
রংপুর জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আলমগীর হোসেন বলেন, মাহিগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা ঘোড়ার গাড়িতে আলু পরিবহন করে। প্রতি বছর কৃষকদের ডাকে ভুরুঙ্গামারী থেকে ঘোড়ার গাড়ি চালকরা এখানে আসেন।