× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিনবদলের স্বপ্ন কুড়িগ্রামের কর্মহীন জনগোষ্ঠীর

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩০ পিএম

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী। খরা, বন্যা, নদীভাঙনে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে উত্তরের এই জনপদ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় এবার কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে ঘুরে দাঁড়াবে লাখো বেকার। সচল হবে জেলার অর্থনীতির চাকা।

আগামী ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে জিটুজি-ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে কুড়িগ্রাম সফরে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। সম্প্রতি কুড়িগ্রামে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। 

সফরসূচি অনুযায়ী, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ২৫ মার্চ তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসার পর ২৮ মার্চ ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ পরিদর্শন শেষে বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে দেশে ফিরবেন। 

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৩৩ একর জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। আরও ৮৬ একর অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। মোট জমির প্রয়োজন হবে ২১১ একর।’

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত সীমান্তবর্তী এবং নদ-নদী যুক্ত জেলা কুড়িগ্রাম। আয়তন প্রায় ২ হাজার ২৫৫ দশমিক ২৯ বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭টির সঙ্গেই ভারতের তিন রাজ্যের সীমান্ত প্রায় ২৭৮ দশমিক ২৮ কিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, চর রাজিবপুর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা। এই উপজেলার প্রায় ৭৯.৮ ভাগ মানুষেরই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরত্বেই সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকা। সীমান্তবর্তী ফুন্টশোলিং ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটি সীমান্ত চুখা জেলায় অবস্থিত। শহরটি ভুটানের শিল্প ও বাণিজ্য শহর হিসেবেও পরিচিত, যা ভারত ও ভুটান সীমান্তে অবস্থান। এই শহরের মাধ্যমেই ভুটানের সঙ্গে ভারতের অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। ফলে ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে পিছিয়ে পড়া এ জেলার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি জেলার স্থলসীমান্ত পথ বঙ্গসোনাহাট দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও দ্রুত হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইমিগ্রেশন চালু হলে যেসব সুবিধা পাবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ

ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা না থাকায় মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ যাতায়াতের জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়কপথ। সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও গত ১১ বছরে ইমিগ্রেশনের মুখ দেখেনি কুড়িগ্রামের বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরটি চালুর পর পণ্য আমদানি শুরু হলেও ইমিগ্রেশন চালু না হওয়ায় লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী দিয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয় ভারতের আসাম রাজ্যের গোলকগঞ্জ বন্দরে। ফলে আর্থিক ক্ষতি, সময় ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। সোনাহাট ইমিগ্রেশন চালু হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই ভারতের আসাম রাজ্যে যাওয়া যাবে। ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য আমদানি শুরুর মধ্য দিয়ে দেশের ১৮তম স্থলবন্দর বঙ্গসোনাহাট চালু হয়। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার বিপরীতে মাত্র ১০ কিলোমিটার পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য আমদানির সুযোগ ঘটে। ফলে সংযোগ ঘটে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টারখ্যাত রাজ্যগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। কিন্তু বন্দরটিতে ইমিগ্রেশন চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ভারত যেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হলে পর্যটকরা অল্প সময় ও কম খরচে ভারত ও ভুটান যেতে পারবে। 

জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে কুড়িগ্রাম শহরে একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিল। তবে লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে মিলটি বন্ধ করে দেয় সরকার। উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও সেখানেও মেলেনি সুফল। ফলে কাজের সুযোগ না থাকায় এখানকার মানুষজন শ্রম বিক্রি করতে পাড়ি জমায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

নদ-নদী বিধৌত কুড়িগ্রামে ৯টি উপজেলায় ৩টি পৌরসভা ও ৭৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নদীভাঙনের শিকার। শতভাগ ভাঙনকবলিত দুটি উপজেলা চিলমারী ও রাজিবপুর। জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ৮টি ইউনিয়ন। ৫ শতাধিক চরাঞ্চলে ৭ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। যাদের অধিকাংশই বেকার। এ জেলার ৭৯ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার খবরে জেলার কর্মহীন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আনন্দের বন্যা। শুধু পরিদর্শন কিংবা প্রতিশ্রুতি নয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় এ অঞ্চলের মানুষ। 

জেলার অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নদীভাঙন ও বেকারত্ব আমাদের জেলার মূল সমস্যা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এখানে কলকারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী নয়। সর্বাত্মকভাবে আমার সব বিনিয়োগ জেলার বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যয় করেছি। ব্যক্তি উদ্যোগে বড় সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। তবে এবার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ ঘুচবে, উন্নয়ন ঘটবে জীবনমানের।’ 

এ ব্যাপারে কথা হয় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করেছি। আরও ৮৬ একর অধিগ্রহণের প্রস্তাব আছে। জেলায় সোনাহাট স্থলবন্দর, চিলমারী নৌবন্দর, রৌমারী তুরা স্থলবন্দর ও পাওয়ার স্টেশন কাছে থাকায় এটি উপযুক্ত স্থান। সরকার আশা করছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে কুড়িগ্রামে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আমরা এর বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। কুড়িগ্রামে কমবে দারিদ্র্য। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা