× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুৎলাইন ঝরে যায় তাজা পাঁচ প্রাণ

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৯ পিএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৭ পিএম

এ ঘরের ওপর দিয়ে গেছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎলাইন। একটি তার ছিঁড়ে পড়ে ঘরে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাঙ্গারপাড় (হালগড়া) এলাকা। প্রবা ফটো

এ ঘরের ওপর দিয়ে গেছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎলাইন। একটি তার ছিঁড়ে পড়ে ঘরে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাঙ্গারপাড় (হালগড়া) এলাকা। প্রবা ফটো

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ের মধ্যে বসতঘরে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক পরিবারের তিন শিশুসহ পাঁচজন মারা গেছে। আরেক গুরুতর আহত শিশু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সবার মুখে মুখে প্রশ্ন–বিদ্যুতায়িত হয়ে কীভাবে এতগুলো মানুষ প্রাণ হারাল?

উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ঝড়ের সময় বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের মূল তার ওই পরিবারের ঘরের ওপর ছিঁড়ে পড়েছিল। টিনের তৈরি হওয়ায় ঘরে থাকা সবাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘরে আগুনও জ্বলে ওঠে। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ঘরের মূল ফটকের সামনে থেকে পাঁচজনের মৃতদেহ ও আহত শিশুকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

নিহতরা হলেন উপজেলার ২ নম্বর পূর্ব জুড়ী ও ৮ নম্বর গোলাবাড়ী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভাঙ্গারপাড় (হালগড়া) এলাকার বাসিন্দা বাকপ্রতিবন্ধী ফয়জুর রহমান, তার স্ত্রী শিরি বেগম, তাদের চার বছর বয়সি একমাত্র ছেলে সায়েম উদ্দিন, নয় বছরের মেয়ে সাবিনা ও ১৫ বছরের আরেক মেয়ে সামিয়া। গুরুতর আহত তাদের ১২ বছর বয়সি মেয়ে সোনিয়া আক্তার। সে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মাথা পুরো ঝলসে গেছে বলে জানা গেছে।

যেভাবে ঘটে ঘটনাটি

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ভোরে বিদ্যুৎ আসার পরপরই ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের মূল তার ছিঁড়ে ফয়জুর রহমানের ঘরের ওপর পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়। ঘরের লোকজন তাড়াহুড়া করে বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারেনি। স্থানীয়রা পাঁচজনকে মৃত ও একজনকে আহত অবস্থায় ঘরের মূল দরজার সামনে থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় মানুষের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

প্রতিবেশী আইয়ুব আলী বলেন, ‘ভোরে প্রচণ্ড শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তখনও চিন্তা করিনি এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখতে হবে। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।’

পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মাসুম আহমেদ বলেন, ‘ফজরের নামাজের পর আমি বাড়ির বারান্দায় ছিলাম। প্রচণ্ড শব্দ শুনে আমার ভাই ও বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়ে যাই শব্দের উৎস লক্ষ করে। গিয়ে দেখি ফয়জুর রহমানের টিনের ঘরের এক পাশে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে পড়ে আগুন লেগেছে। দ্রুত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ফোন দিয়ে জানাই। ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিই। স্থানীয়দের সহায়তায় ছয়জনকে উদ্ধার করি। পাঁচজনই পুরোপুরি নিস্তেজ অবস্থায় ছিল। একটি মেয়েশিশুর কিছুটা নড়াচড়া দেখি। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’

জুড়ী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পরিদর্শক এস এম শামীম বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আমরা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা মৃতদেহ ও আহতকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। বিদ্যুতের মূল লাইন ছিঁড়ে ঘরের ওপর পড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।’

সারিবদ্ধ মৃতদেহ। প্রবা ফটো

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যা বলছে

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি–অনেক আগে থেকে ওই জায়গায় ১১ হাজার ভোল্টের মূল লাইন রয়েছে। কয়েক বছর আগে এ লাইনের নিচেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিনের বাড়ি তৈরি করা হয়। এক বছর আগে খোঁজ পেয়ে বাড়িটির পাশে আরেকটি খুঁটি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাড়ির মালিকের বাধায় খুঁটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা চৌধুরী বলেন, ‘রাতে ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। শেষ রাতের দিকে ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলে পুনরায় বিদ্যুৎ সচল করা হয়। এরই মধ্যে পুনরায় ঝড় শুরু হলে ১১ হাজার ভোল্টের মূল লাইন ছিঁড়ে পড়। খবর পেয়ে আমরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করি।’

একসঙ্গে এত মানুষ বিদ্যুতায়িত হওয়ার কারণ কী হতে পারে–জবাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো ঘরটি টিন দিয়ে তৈরি, এমনকি দরজাও টিনের। ফলে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঘরের বাসিন্দারা হয়তো তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হতে পারে। খবর পেয়ে আমাদের জেনারেল ম্যানেজারসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে।’

খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো সমাহিত করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারের জিম্মায় দেওয়া হবে।’

ঈদ আনন্দ নিরানন্দে

স্থানীয়রা জানান, বাকপ্রতিবন্ধী ফয়জুর রহমান ঠেলাগাড়ির চালক ছিলেন। তার এক বোন ও এক ভাইও বাকপ্রতিবন্ধী। এলাকায় ফয়জুর রহমান অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অভাবের সংসারে তার ওপরই নির্ভরশীল ছিল পুরো পরিবার।

প্রতিবেশী সোহান ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ফয়জুরের ছেলে সায়েম উদ্দিন দুই দিন আগে আমাদের বাড়িতে এসে ঈদের নতুন জামা কেনার জন্য বাজারে যাওয়ার কথা বলেছিল। তার দরিদ্র বাবা না দিলে আমি দেব বলে তাকে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু ঈদের জামা কেনার আগেই সায়েম পরিবারের আরও চার সদস্যের সঙ্গে পরপারে চলে গেল। এ কষ্ট সইবার নয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।’

২ নম্বর পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরিরুল ইসলাম মঈন বলেন, ‘এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ফয়জুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত সহজ-সরল ছিলেন। অভাব থাকলেও তার মধ্যে ছিল সততা। গতকালও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তার ঘরে বিদ্যুতের লাইন আসবে কবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কি হুকুম–নিজের ঘরে বিদ্যুৎ না থাকলেও বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে সে সপরিবার মারা গেছে।’

পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলাম রুহেল বলেন, ‘কোনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমন মর্মান্তিক ঘটনা এ অঞ্চলে এই প্রথম।’

তিনি আরও জানান, নিহতদের জানাজা নামাজ বিকাল ৪টায় স্থানীয় হাজি ইনজাদ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হবে। এরপর গোয়ালবাড়ী কবরস্থানে এক সারিতে পাঁচজনকে সমাহিত করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা