× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৫৩ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি যে বধ্যভূমি

এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৩ এএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪ ১১:১৫ এএম

১৯৭১ সালে রাজাকাররা এখানে ১৮০ জনকে গুলি ও জবাই করে গণহত্যা চালিয়েছিল।বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামে শ্রীধাম গোপালচাদ সাধু ঠাকুরের সেবাশ্রম। প্রবা ফটো

১৯৭১ সালে রাজাকাররা এখানে ১৮০ জনকে গুলি ও জবাই করে গণহত্যা চালিয়েছিল।বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামে শ্রীধাম গোপালচাদ সাধু ঠাকুরের সেবাশ্রম। প্রবা ফটো

১৯৭১ সালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামে শ্রীধাম গোপালচাদ সাধু ঠাকুরের সেবাশ্রমে রাজাকাররা ১৮০ জনকে গুলি ও জবাই করে গণহত্যা চালিয়েছিল। সেদিনের স্মৃতি আজও কাঁদিয়ে বেড়ায়। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও শহীদদের স্মৃতিতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মকে জানাতে বধ্যভূমি সংরক্ষণের। 

‘রাজাকারের প্রতিরোধে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা যুদ্ধ করেও বাঁচাতে পারলাম না গোটা গ্রামসহ দেড়শতাধিক মানুষের প্রাণ।’ অশ্রুসজল চোখে এ কথা বলেন লক্ষ্মীখালী ধামের গোপাল সাধু ঠাকুরের বংশধর ননী গোপাল সাধু ঠাকুর। তিনি লক্ষ্মীখালী গ্রামে রাজাকারের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

যুদ্ধে অংশ নেন একই গ্রামের দুলাল শিকদারও। তিনি জানান, মোংলা উপজেলার সাহেবের মাঠ এলাকায় আগেই অবস্থান নেন বাগেরহাট জেলার রাজাকার বাহিনীর শান্তি কমিটির প্রধান রজ্জবালির নেতৃত্বে এক ১০০/১৫০ জন রাজাকার। ১৯৭১ সালে ২৪ মার্চ ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রাজাকাররা লক্ষ্মীখালী গ্রামে প্রবেশ করে চারদিক থেকে আক্রমণ করে। প্রতিরক্ষায় আমরা গ্রামের শতাধিকের লোকজন ঢাল, সুরকি ও ৭টি বন্দুক নিয়ে রাজাকারদের প্রতিরোধের চেষ্টা করি। ওরা সংখ্যায় বেশি ও ভারী অস্ত্র থাকায় তাদের সঙ্গে দেড়ঘণ্টা যুদ্ধ করে পিছু হটি। অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামজুড়ে ৪০০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারপিট, কুপিয়ে ও পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করে ১৮০ জনকে। তাদরে লাশ ঠাকুরবাড়ির সামনে বনজঙ্গল মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে। 

তিনি আরও জানান, গোপাল ঠাকুরের তৎকালীন গদিঘরে ভক্ত হিরামন ঘোষাই, মনো ঘোষাই, ধোনা ঘোষাইকে কুপিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় রাজাকারেরা লক্ষ্মীখালী গ্রামের মুকুন্দ শিকদার, মনোয়ার শিকদার, নিশিকান্ত মন্ডল, জগনাথ ঢালী, দোনাচার্য মন্ডলকেও হত্যা করে। এ ছাড়া সুরেন্দ ঢালী, অতুল বৈরাগী, দুলাল বৈরাগী, গনেশ শিকাদার, কাকরাতলী গ্রামের ইয়াকুব আলী হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে গেলে তাদের হত্যা করে রাজাকাররা। এভাবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঠাকুরবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া দেড়শতাধিক মানুকে সেদিন হত্যা করেছিল। 

স্থানীয় বিশ্বজিৎ হালদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাওলাদার, পরিমল মন্ডল, দুলাল শিকদার, অনিল কৃষ্ণ মন্ডল, বিধান বসু, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক শেখসহ অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রতি বছর এ দিনটি এলে অস্থায়ী ভিত্তিতে কালো কাপড় দিয়ে, ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি এখানে আধুনিকায়ন বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের।

সেবাশ্রমের বর্তমান গদিনশিন বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সাগর সাধু ঠাকুর বলেন, লক্ষ্মীখালীর গণহত্যায় শহিদদের স্মৃতিতে বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিনের। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকেও লিখিতভাবে আবেদনও করা হয়েছিল। বধ্যভূমির সংরক্ষণের কাজ হবে শুনে আসছি। কিন্তু আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে না এলাকাবাসী। 

সুন্দরবন সাব-সেক্টরের যুদ্ধকালীন স্টুডেন্ট কমান্ডার মো. লিয়াকত আলী খান বলেন, লক্ষ্মীখালী ঠাকুরবাড়িতে রাজাকার ও পাকসেনারা ২৪ মার্চ ভোর রাত থেকে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। এদিন কয়েক গ্রামে অগ্নিসংযোগ, গুলি ও জবাই করে ১৮০ জনকে হত্যা করেছিল। ঠাকুরবাড়ি বিলে এনে তাদেরকে মাটিচাপা দিয়ে গণদাফন করা হয়েছিল। এ ছাড়াও একই দিনে চন্ডিপুর গ্রামে ২৭ জন, শাখারীকাঠি গ্রামে ৩০ জন, তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে ৩ জন ও দৈবজ্ঞহাটিতে ১১ জন শহীদ হয়েছিলেন। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধার চেতনার সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক শিগগিরই বাস্তবায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস। 

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম তারেক সুলতান বলেন, সরকার সারা দেশে বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। উপজেলার লক্ষ্মীখালীতে ১৯৭১ সালে গণহত্যা হয়েছিল, এই গুরুত্বপূর্ণ বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা