চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২০:৫২ পিএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:২১ পিএম
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘিনী ‘জয়া’ এবং তার তিন মেয়ে প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী। প্রবা ফটো
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ ‘জো বাইডেন’ ও বাঘিনী ‘জয়া’র ঘরে জন্ম নেওয়া তিন শাবকের নাম রাখা হয়েছে। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে তাদের নাম রাখা হয়- প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী। জন্মের এক মাসের মাথায় ঘটা করে আয়োজন করে নতুন নাম দেওয়া হয় বাঘ শাবকগুলোকে।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে নামকরণের আয়োজনে যোগ দিতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাঘ শাবক তিনটিকে খাঁচা থেকে বের করে জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন। প্রথমবারের মতো তাদের খাঁচার বাইরে কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। এর মধ্য দিয়ে জন্মের এক মাস পর শাবকগুলো মানুষের দৃষ্টির মধ্যে এলো।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘‘তিনটি ব্যাঘ্র শাবকের বয়স এক মাস পূর্ণ হয়েছে। তিনটিই মেয়ে। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তিনটি বাঘের বাংলা নাম রেখেছি। এ তিনটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে ‘জো বাইডেন’ পরিবারে। প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে বাঘটির নাম জো বাইডেন রাখা হয়েছিল।’’
২৩ ফেব্রুয়ারি জো বাইডেন পরিবারে তিনটি বাচ্চার জন্ম হয়। সাত দিন পর তাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়, তিনটিই মেয়ে। এই তিন শাবকই এবার ঈদ বিনোদনে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ হবে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ।
তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এগুলো আমরা উন্মুক্ত করেছি। এজন্য আমরা নামকরণের আয়োজন করেছি। ফিজিক্যালি এগুলো এখন যথেষ্ট ভালো আছে। মায়ের ভালো রেসপন্স পাচ্ছে। হাঁটাচলা-দৌড়ানো আস্তে আস্তে শিখতে শুরু করেছে। সামনে ঈদুল ফিতর, এবার ঈদের প্রধান আকর্ষণ হবে এ তিনটি ছোট বাঘ।’ শুভ জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ মুহূর্তে ১৭টি বাঘ আছে। এর মধ্যে পাঁচটি ছেলে ও ১২টি মেয়ে। এর মধ্যে পাঁচটি বিরল সাদা বাঘ।
২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩৩ লাখ টাকায় কেনা ১১ মাস বয়সি রাজ এবং ৯ মাস বয়সি পরীকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর তিনটি ছানার জন্ম হয়, যার মধ্যে দু্টি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’, অন্যটি কমলা-কালো ডোরাকাটা। পরদিন একটি সাদা বাঘ শাবক মারা যায়। অন্য সাদা বাঘিনীটি ‘শুভ্রা’। কমলা-কালো বাঘিনীটির নাম দেওয়া হয় ‘জয়া’। শুভ্রা বাংলাদেশে প্রথম সাদা বাঘ।
সেই কমলা-কালো জয়ার ঘরে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম নেয় তিন শাবক। কিন্তু প্রথমবার সন্তান জন্ম দেওয়ার পর জয়া অসহিঞ্চু আচরণ শুরু করে। তার অবহেলায় পরদিন দুটি শাবক মারা যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা আরেকটির প্রাণ রক্ষায় নিজের হেফাজতে নেন চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শুভ।
চিড়িয়াখানার কর্মীরা নিজেরাই দুধ খাইয়ে, নিবিড় পরিচর্যা করে বাঘের ছানাটিকে বাঁচিয়ে তোলেন। সাড়ে পাঁচ মাস পর ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল ‘জো বাইডেন’ নামের বাঘের ছানাটিকে খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে এসেছিল। শুভ তখন বাঘের ছানাটির নাম রেখেছিলেন ‘বাইডেন’, যদিও বলা হয়- প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে বাঘটির নাম রাখা হয় ‘জো বাইডেন’।
মানুষের ঘরে বড় হওয়া সেই জো বাইডেনের ঔরসে ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জন্ম নেয় তিন শাবক। মানুষের ঘরে বেড়ে ওঠা বাঘের ঔরসে শাবকের জন্ম বিরল ঘটনা বলেছিলেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।