× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এমভি আব্দুল্লাহ

মুক্তিপণ নাকি সামরিক অভিযান, ‘বাড়তি চাপে’ মালিকপক্ষ

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৫ পিএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৬ পিএম

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ফাইল ফটো

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ফাইল ফটো

আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এখন পর্যন্ত দুই দফা জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ। ২০১০ থেকে ২০২৪- এই ১৪ বছরের ব্যবধানে দুই দফা দুটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দুটি জাহাজই চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লাইসেন্সের। প্রথম দফা ২০১০ সালে এমভি জাহান মনি অপহরণের ১০০ দিন পর মুক্তিপণের বিনিময়ে নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধার হয়েছিল। এবারও সেই পথেই হাঁটছে মালিকপক্ষ।

মুক্তিপণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণে আলোচনা এগিয়ে নিলেও জাহান মনির চেয়ে আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে বেশি চাপে রয়েছে শিল্পগ্রুপটি। জাহান মনি অপহরণের পর উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গটি ছিল না। তাই সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা করে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করেছিল। কিন্তু এমভি আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী এবং সোমালিয়ার পুলিশ। আপাতত দৃষ্টিতে সামরিক চাপ জলদস্যুদের ওপরই পড়ছে বলে মনে করা হলেও চাপের উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও। সামরিক পদক্ষেপের আতঙ্ক ভর করেছে জিম্মি নাবিকদের পরিবারে। তারা সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে নয়। একইভাবে সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষও চায় না জাহাজ উদ্ধারে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সামরিক পদক্ষেপের কারণে জিম্মিদের জীবন সংকটে পড়তে পারে এবং জাহাজে থাকা কয়লার কারণেও জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই মুক্তিপণ দিয়েই জিম্মি সংকট নিরসন করতে চাইছে সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ। 

এদিকে জলদস্যুরা আদৌ সামরিক অভিযানের চাপে রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নৌবাহিনী ও সোমালিয়ার পুলিশের এমন ‘চাপ’ তৈরির কৌশলকে কতটা বিবেচনায় নিচ্ছে জলদস্যুরা, তা এখনও স্পষ্ট নয় জাহাজমালিকের কাছে। বরং দস্যুরা এখনও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এসব কারণে মালিকপক্ষ মনে করছে, জাহান মনির ক্ষেত্রে যতটা সহজ ছিল আলোচনা, এবার ততটা নয়। নানা দেশের সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতির কারণে এবার বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এই চাপ মোকাবিলা করেই ঈদের আগেই জিম্মিদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে মালিকপক্ষ।

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে এবং পরিবারগুলোকে হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে ইফতারির আয়োজন করেছে। মূলত জিম্মিদের ফেরানোর অগ্রগতিবিষয়ক তথ্য জানানো এবং পরিবারগুলোর পাশে থাকার অংশ হিসেবে এই আয়োজন। তবে পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার প্রক্রিয়ার চলমান আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি। 

১৪ বছরের ব্যবধানে জিম্মি দুটি জাহাজ উদ্ধার প্রক্রিয়ায় কোনটিকে তুলনামূলক বেশি জটিল মনে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কেএসআরএমের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহান মনি উদ্ধার প্রক্রিয়ার সময় সামরিক অভিযানের চাপ ছিল না। আব্দুল্লাহ উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি আছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর। এ ছাড়া খবর পেয়েছি, সোমালিয়ার পুলিশও দেশটির উপকূলীয় এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এসব তথ্য আমরা গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পারছি। বাস্তবতা হলো, প্রতিটি কাজই কঠিন। আলোচনার মাধ্যমে সহজ করে নেওয়ার কাজটুকুই মালিকপক্ষ করছে।’ আলোচনার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় হলে সবই জানতে পারবেন।’

মিজানুল ইসলাম সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিলেও কেএসআরএমের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এমভি আব্দুল্লাহকে ঈদের আগেই উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মুক্তিপণ নিয়ে মালিকপক্ষ গণমাধ্যমে কথা বলতে চায় না। তবে মুক্তিপণ নিয়েই যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। এক্ষেত্রে সরকার ও মালিকপক্ষ মুক্তিপণেই ‘মুক্তির’ পথ খুঁজছে। তাই ভারত, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীকে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে জলদস্যুরাও জেনেছে। এ কারণে আলোচনা কিছুটা গতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে মালিকপক্ষ আশায় বুক বাঁধছে, অক্ষত অবস্থায় জিম্মিদের ঈদের আগেই দেশে ফেরানো যাবে। এই লক্ষ্যে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

তবে এক্ষেত্রে জলদস্যুদের গ্রুপে যুক্ত থাকা নানাজনের হিস্যার বিষয়টিও যুক্ত। ফলে মালিকপক্ষ চাইলেই মুক্তিপণের টাকা দিতে পারবে না। সোমালিয়া কিংবা বাংলাদেশ নয়, তৃতীয় একটি দেশে বসে তৃতীয় মাধ্যমে থাকা ব্যক্তিই দর-কষাকষি করছে। সেই আলোচনা শেষ হলে মুক্তিপণ দিতে হবে। জাহাজ মনির মুক্তিপণের একটি অংশ পরিশোধ করতে হয়েছিল জলরোধী ব্যাগ ভর্তি করে। হেলিকপ্টারযোগে জলদস্যুদের দেখানো স্থানে ব্যাগভর্তি ডলার ফেলে আসতে হয়েছিল। এবার সেখানেও কিছুটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সোমালিয়া পুলিশ। ফলে এবার ভিন্ন জায়গা খুঁজতে হতে পারে জলদস্যুদের। আবার এই মুক্তিপণের পুরো অংশ জাহাজ জিম্মিকারীরা পাবে না। এ কাজে আরও যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তাদেরও থাকবে হিস্যা। বিনিয়োগকারী পক্ষগুলো তাদের অংশ বুঝে পেলেই কেবল জাহাজ মুক্ত হবে, এটা মালিকপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকার অবগত আছে। জলদস্যুদের সব পক্ষের হিস্যা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটুকু করার কথা তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে।

এদিকে সর্বশেষ সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল পর্যন্ত এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলের অদূরেই ছিল। কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটি উপকূলের কাছাকাছি নোঙর করে জলদস্যুরা। 

এরই মধ্যে ১২ মার্চ জাহাজের অবস্থান জানিয়ে পাঠানো একটি নোট গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। সেই নোটের বর্ণনা পড়ে জাহাজটির জিম্মি সময়ের কিছু তথ্য জানা গেছে। নোটটি এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমের কাছে পাঠিয়েছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। নোটশিটে জাহাজের সিটাডেলে (জাহাজের গোপন কক্ষ, যেটিতে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া যায়) যাওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও দুজন না যাওয়ার তথ্য রয়েছে। এই দুজনের একজন এমভি আব্দুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। যাকে প্রথমেই অস্ত্র ধরে জিম্মি করেছিল দস্যুরা। অন্যজন ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার। তারা দুজন সিটাডেলে পৌঁছতে না পারায় পরবর্তীতে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত জলদস্যুরা জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

১২ মার্চ দুপুর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২২ দফা নোট লেখেন ক্যাপ্টেন। এই নোটগুলোর তথ্য পড়ে বোঝা যায়, জিম্মি হওয়ার সময় জাহাজে কী ঘটেছিল? সে সময় এমভি আব্দুল্লাহ থেকে আশপাশের আট থেকে নয়টি জাহাজ, নৌবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু কারও সাড়া পাওয়া যায়নি- সেই তথ্যও রয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত অন্য একটি জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জাহাজ থেকে নিয়মিত তথ্য পাঠানো হয় মালিকপক্ষের কাছে। সাধারণত প্রতিদিন দুপুরে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই তথ্য বিবরণীতে হয়তো জাহাজটি জিম্মি মুহূর্তের সর্বশেষ তথ্য রয়েছে। তবে এগুলো সাধারণ গোপনীয় বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘সিটাডেল জাহাজের একটি গোপন কক্ষ, এটি জাহাজের নাবিক ছাড়া অন্য কেউ জানে না। এখানে বসে জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা যায়। বাইরে থেকে কেউ হামলা করলে নাবিকরা যদি সেই কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন, তাহলে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। এমভি আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে হয়তো সব নাবিক সিটাডেলে প্রবেশ করতে পারেননি বা তার আগেই কাউকে জিম্মি করেছিল। এ কারণে সবাই গোপন কক্ষে আশ্রয় নিতে পারেননি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা