আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২০:১৭ পিএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২০:৫১ পিএম
ফাইল ফটো
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এত সুন্দর চট্টগ্রাম শহর, কিন্তু এখানে কোনো পার্ক নেই। শিশুদের পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বিনোদনের জায়গা নেই, মানুষকে কী জবাব দেব। শহরে পার্ক করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তীরসহ কয়েকটি জায়গার প্রস্তাব করেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তখন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিজের ফেসবুক পেজে কথাগুলো লিখেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়রের সেই পোস্টে রবিউল ওয়াহাব কমল নামে একজন কমেন্ট করেছেন ‘মশার কামড়ে অতিষ্ট নগরবাসী। সেটার ব্যাপারে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?’
চার দিন আগে দেওয়া মেয়রের ওই স্ট্যাটাসে সোমবার (২৫ মার্চ) বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫১ জন কমেন্ট করেছেন। দুয়েকজন ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবগুলো কমেন্টেই মশার উপদ্রব নিয়ে বিরক্তি ও এর হাত থেকে বাঁচতে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নাগরিকরা।
নিজের প্রত্যাহিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নিয়মিত ওই ফেসবুক পাতায় স্ট্যাটাস দেন মেয়র রেজাউল করিম। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারটি পোস্ট দেন মেয়র রেজাউল করিম। এসব পোস্টের বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য থাকলেও কয়েক মাস ধরে সেসব পোস্টের কমেন্ট সেকশনে কোনো বৈচিত্র্য নেই। ঘুরেফিরে মশার উপদ্রব নিয়েই প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন নাগরিকরা।
রবিবার রাতে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড সড়কে ঝকঝকে নতুন আধুনিক এলইডি বাতির বিষয়ে জানিয়ে পোস্ট করা হয় মেয়র রেজাউল করিমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এম ইউ সোহেল নামে একজন সেখানে প্রশ্ন করেছেন, ‘মশার ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত কী মেয়র মহোদয়? এভাবে চলতে থাকলে তো মানুষ রক্তশূন্যতায় ভুগবে!’
মেয়রের ফেসবুক পাতার মতোই অবস্থা চট্টগ্রামের সবখানে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার অন্তত এক ডজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ চট্টগ্রামবাসী। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
মুরাদ উদ্দিন রাজু নামে হালিশহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘মশার জন্য ঘরে-বাইরে কোথাও ১০ সেকেন্ড স্থির হয়ে বসা বা দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। সারা দিন তো আর মশারির ভেতর থাকা যায় না। অবস্থা এমন হয়েছে চুপ করে কয়েক সেকেন্ড বাইরে দাঁড়ালেই দলে দলে মশা ঘিরে ধরছে। হ্যামিলনের ইঁদুরের উপদ্রবের গল্প পড়েছিলাম রূপকথার গল্পে। এখানে মশার উপদ্রব সেটাকে ছাড়িয়ে গেছে। যেকোনো মূল্যে এটা থেকে মুক্তি চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই দেখলাম না সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।’
যদিও সিটি করপোরেশন নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলছে। তবে প্রকৃত অর্থে মশক নিধনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম অনেক দিন ধরেই চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
খুলশীর বাসিন্দা ফারহান বিন আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মশা নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কিন্তু মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি।’
নাগরিক উদ্যোগে হচ্ছে ফগিং, মিলছে সুফলও
এমন পরিস্থিতিতে হালিশহরের এ ব্লক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে ফগার মেশিন ও মশার ঔষধ কিনে ছিটাচ্ছে। মো. সালাউদ্দিন নামে একজনের উদ্যোগে মসজিদের জন্য একটি ফগার মেশিন কেনা হয়। রবিবার দুপুরে ঔষধ ছিটানোর পর শুধু ওই মসজিদ এলাকা থেকে দুই বস্তা মরা মশা বাইরে ফেলেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
মোরশেদ আলম রানা নামে একজন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘১৫-২০ মিনিট ঔষধ ছিটানোর পর মসজিদের ভেতর থেকেই দুই বস্তার মতো মরা মশার স্তুপ পরিষ্কার করেছি আমরা। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনকে ঔষধ ছিটাতে দেখিনি। আগে যখন ছিটিয়েছে তখন একটা মশাও মরতে দেখিনি। তাদের কাছের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে এখন। তারা আসলে মশার সমস্যা সমাধানে আন্তরিক কি না? পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক না।’
উদ্যোক্তা মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঔষধসহ ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তার। শুরুতে তিনি ও তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন এককভাবে খরচ বহন করলেও পরে মসজিদের অনেক মুসল্লিও তাদের সহযোগিতা করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন মেশিনটি ব্যবহারের জন্য।
সালাউদ্দিন বলেন, ‘গত দুই দিনে ৮-১০টি জায়গা থেকে মানুষ এসেছে তারা খরচ দিয়ে মেশিনটি ব্যবহার করতে চায়।’
স্থানীয় এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে তিন থেকে চারটা ফগার মেশিন বিক্রয় হয়েছে। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মানুষ ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, ‘মাঝখানে কিছু দিন ঔষধ ছিল না। এখন পর্যাপ্ত ঔষধ মজুদ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’