দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ উপজেলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম রণাঙ্গন। ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামাল এখানে জীবন উৎসর্গ করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। আখাউড়ার দরুইন গ্রামে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ চলাকালে শত্রুসেনার মুহুর্মুহু আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা যখন কিছুটা পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত, তখন মোস্তফা কামালের মেশিনগান গর্জে উঠেছিল। এ সময় তিনি পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। কাভারিং ফায়ারে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচালেও সম্মুখযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এই বীর সিপাহি। পরে সেখানেই একটি পুকুর পাড়ে তাকে সমাহিত করা হয়। এখন অনেকটা অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে এই মুক্তিযোদ্ধার সমাধি।
১৯৯৭ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কুমিল্লা সেক্টরের তত্ত্বাবধানে সমাধির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়। পরে ২০২২ সালে জেলা পরিষদ থেকে কিছু সংস্কার করা হয়। রবিবার (২৪ মার্চ) সরেজমিনে সমাধিসৌধে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের মানুষ নানাভাবে পরিবেশকে নষ্ট করছে। এখানে অবাধে বিচরণ করছে গবাদি পশু। চত্বরে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। পাশের একটি বাড়িতে নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে সমাধির পাশেই।
‘তিনি আমাদের জাতির গর্ব। এখানে এসে আমরা হতাশ। কারণ একজন বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থল যেমন থাকার কথা তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’ বলছিলেন সমাধি দেখতে আসা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের উদয়ন স্কুলের পরিচালক মতিউর রহমান সাগর। তিনি বলেন, ‘স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এসেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের সমাধি দেখতে। আমার কাছে মনে হচ্ছে যথাযথ মর্যাদায় সমাধিস্থলটি রক্ষিত নেই। এখানে অবাধ যাতায়াত রয়েছে গবাদি পশুর। আশপাশের লোকজন জায়গাটির অপব্যবহার করছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাধিস্থলটির যথাযথ মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
পরিদর্শনে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, বইপত্রে অনেক পড়েছি এই জায়গার কথা। এখানে এসে আনন্দিত এবং গর্ববোধ করছি- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি দেখতে পেরেছি। কিন্তু জায়গাটি ঠিকমতো সংরক্ষণ বা যত্ন করা হচ্ছে না। বিষয়টি দেখে কষ্ট লাগল।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘আখাউড়া মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ কিছু নিদর্শন রয়েছে। তার মাঝে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামালের সমাধি অন্যতম। সমাধিস্থলে বর্তমান যে অবস্থা, তা আরও উন্নয়নের প্রয়োজন। জাদুঘরের জন্য ভবন, বাউন্ডারি ও সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) মাধ্যমে প্রাক্কলন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত অনুমোদন হয়ে যাবে। এগুলো হয়ে গেলে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো সমস্যা থাকবে না।’