× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১০ সন্তানের কারও কাছেই ঠাঁই মেলেনি বৃদ্ধা জননীর

মাদারীপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২০:৪৬ পিএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২০:৫৮ পিএম

সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা ফরিদা বেগম। প্রবা ফটো

সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা ফরিদা বেগম। প্রবা ফটো

দশ সন্তানের মধ্যে চার ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বামীহারা বৃদ্ধা ফরিদা বেগম। আর ছয় মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন সচ্ছল পরিবারেই। সেই সন্তানদের নিয়ে আক্ষেপ করে আশি বছরেরও বেশি এই বৃদ্ধা বলছিলেন, ‘একটু সুখের আশা করেছিলাম সন্তানদের কাছে। এখন সেই সুখ কপালে নেই।’

গর্ভে ধারণ করা সন্তানদের নিয়ে কেন এমন দুঃখ এই জননীর? ফরিদার অভিযোগ— ছেলেরা তার সব সম্পত্তি কৌশলে বাগিয়ে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এরপর সন্তানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কারও ঘরেই ঠাঁই মেলেনি তার। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয়হারা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন ৮২ বছরের হতভাগা এই মা।

বৃদ্ধা বলেন, ‘স্বামীর রেখে যাওয়া ও আমার সব সম্পত্তি ছেলেরা কৌশলে লিখে নিয়ে গেছে। আমার এখন কিছুই নেই। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এই ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। আমি আমার সব সম্পত্তি ফেরত চাই। আমি বৃদ্ধ বয়সে একটু শান্তি চাই।’

ফরিদা বেগম মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর পেয়ারপুর গ্রামের কলম গড়িয়ার স্ত্রী। তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিদিনের বাংলাদেশের। প্রতিবেদককে দেখার সঙ্গে সঙ্গেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তবে তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সন্তানেরা। তাদের ভাষ্য— সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে এই পরিস্থিতির জন্য তাদের মা-ই দায়ী।

জানা যায়, স্বামী কলম গড়িয়া মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। এরপর কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। মেয়েদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজো ছেলে কামাল টিটিসিতে চাকরি করেন, সেজো ছেলে হেমায়েত পল্লী চিকিৎসক, আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া এলজিইডিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া ছয় মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে।

অথচ ফরিদার কপালে নেই সুখের দেখা। এই ১০ সন্তানের বিরুদ্ধেই তার অভিযোগ। তবে মায়ের অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বড় ছেলে দেলোয়ার, আর ছোট ছেলে কাজলের দিকে।

ফরিদা বলেন, ‘স্বামীর রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছি। আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে সন্তানেরা লিখে নিয়ে গেছে। আমাকে একটা টাকাও দেওয়া হয়নি।’

তার আরও অভিযোগ, সম্প্রতি সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া মারধর করে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বড় ছেলে দেলোয়ার তাকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলেছেন।

ফরিদা জানান, ছোট ছেলে বের করে দেওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের বাড়িতে। সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাকে দেখভাল করবেন না। আর অন্য ছেলেদের মুখেও একই কথা। এরপর থেকেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তিনি।

ফরিদার সন্তানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। দোষীদের বিচারের পাশাপাশি ফরিদার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে সরকারিভাবে আইনি সহায়তার পাশাপাশি ফরিদা বেগমের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

তবে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া আর জোর করে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।

বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছে মা। এজন্য মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখব না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছে, তাদের কাছে মা থাকুক।’

ফরিদার ছোট ছেলে কাজল গড়িয়ার ভাষ্য, ‘আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বলে। আমি মাকে মারধর করিনি, আর জোর করে সম্পত্তি লিখেও নিইনি। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছে। আমার মা, ভাইদের একই সম্পত্তি বারবার লিখে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে, ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।’

আরেক ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ‘ছোট ভাই কাজল গড়িয়া বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাই-বোন সবাইকে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দিলে মায়ের এই অবস্থা হতো না। আমার মাকে আমি বলেছি, আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে। মা আমাকে সম্পত্তি কম দেওয়ায় সে নিজেই আমার ঘরে থাকবে না।’

জানতে চাইলে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া বলেন, ‘আমি জোর করে সম্পত্তি লিখে নিইনি। মা তার ১০ ছেলেমেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছেন। মাকে আমি খাবার দিই না, এ কথা ঠিক না। মা আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফরিদা বেগমের স্বামী মারা গেছে ৩৫ বছর আগে। তিলে তিলে ছেলেমেয়েদের বড় করে এখন বৃদ্ধ বয়সে তার ঠাঁই হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। ফরিদা বেগমকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন। আইনি সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও দেওয়া হবে। জোর করে সম্পত্তি লিখে নিলে সেটা ফেরত আনার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা