× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দ্রব্যমূল্যের চাপ পড়েছে পোশাকের ওপর

রানা আহমেদ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:২৭ পিএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৩২ পিএম

ঈদের আগে শশব্যস্ত পরিবেশ বিরাজ করে বৃহত্তম গার্মেন্টসপল্লী কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জ। এবার ব্যস্ততা থাকলেও তা অন্যবারের মতো নয়। এ বছর ব্যবসায় ভাটার টান টের পাচ্ছেন উৎপাদকরা। প্রবা ফটো

ঈদের আগে শশব্যস্ত পরিবেশ বিরাজ করে বৃহত্তম গার্মেন্টসপল্লী কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জ। এবার ব্যস্ততা থাকলেও তা অন্যবারের মতো নয়। এ বছর ব্যবসায় ভাটার টান টের পাচ্ছেন উৎপাদকরা। প্রবা ফটো

কাজের ব্যস্ততায় দম ফেলার ফুরসত পান না কেরানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থাকা পোশাক কারখানার কারিগররা। দিন-রাত এক করে সমানে দুই হাত চালিয়েও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খান। প্রত্যেক ঈদের আগে এমনই শশব্যস্ত পরিবেশ বিরাজ করে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম গার্মেন্টসপল্লী কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে। এবারও ব্যস্ততা আছে তবে অন্যবারের মতো নয়। ব্যবসায় এবার ভাটার টান টের পাচ্ছেন এলাকার উৎপাদকরা।

দেশে তৈরি পোশাকের যে চাহিদা তার বড় অংশই সরবরাহ করে থাকেন কেরানীগঞ্জের উৎপাদকরা। তবে এবার কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অথচ ঈদ প্রায় এসেই গেছে। ব্যবসার এমন অবস্থার কারণ কী জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে আছে পোশাকের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে আর্থিক সংকটের প্রভাব। সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীদের আসার হার কমেছে। এলসি বিড়ম্বনার কারণে এবার আমদানিও কম। 

তৃণমূলের দোকানিদের দাবি, এবার উৎসবের কেনাকাটা জমছে না। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সবাই আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে আছে। ফলে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। 

সরেজমিন এলাকার গার্মেন্টস ও মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন আসছেন প্রত্যন্ত এলাকার পাইকারি ক্রেতারা। ঘুরে ঘুরে কিনছেন পছন্দসই পোশাক। বরাবরের মতো এবারও হরেক রকম ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রি-পিসসহ বাহারি সব পোশাকে সজ্জিত হয়েছে এখানকার শোরুমগুলো। বেচাকেনা নিয়ে তেমন সন্তুষ্টি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বেচাকেনা বাড়বে।

জানা যায়, এই এলাকার মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদে সেটা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়। এবার ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রির লক্ষ্য ব্যবসায়ীদের। তবে এবার এই লক্ষ্য পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদের কেনাকাটা নিয়ে আলাদা করে ভাবার সুযোগ পাচ্ছে না অনেকেই। কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোতে বেশিরভাগ পোশাক তৈরি হয় এই সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে। এই পোশাকপল্লীতে ৫ হাজারেরও বেশি কারখানার পাশাপাশি আছে ২০ হাজারের মতো শোরুম। 

কারখানাগুলোতে নিজেদের ডিজাইন করা পোশাক তৈরির কাজ চলে রাত-দিন। পাইকারি বেচাকেনার পাশাপাশি শোরুমগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি পোশাকও ওঠে। সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট থাকে এই পোশাকপল্লী। কারখানাগুলোতে কাজ করছেন ২ লাখেরও বেশি শ্রমিক। ঈদ এলে এই সংখ্যা আরও ১ লাখ বেড়ে যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের দাবি, এ বছর বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না। তাই ভালো লাভ করা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।

কথা হয় শেখ সাদী গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সুতা, ফেব্রিকস ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম একটু বেশি। তবে কম মুনাফায় বিক্রির কারণে বাজারে এখনও আমাদের পোশাকের চাহিদা রয়েছে। 

আলিফ ওয়ান গার্মেন্টসের ম্যানেজার আব্দুল বাতেন বলেন, হাজার হাজার পিস পোশাক উৎপাদন করে বসে আছি। কিন্তু পাইকারি ক্রেতাদের খুব একটা দেখা পাচ্ছি না। দুই-চার জন যদিওবা আসেন, তারাও বাকি নিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে গার্মেন্টস শিল্পে ধংস হয়ে যাবে। আমরা শ্রমিকদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও কারখানার ভাড়া পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এছাড়া আছে ব্যাংকলোন, সেটা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সুনামগঞ্জ থেকে পোশাক কিনতে কেরানীগঞ্জে আসা খুচরা ব্যবসায়ী মো. রায়হান খান জানান, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে সব ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। ডিজাইন ও চাহিদা অনুযায়ী দামও তুলনামূলক কম। তাই বেশ কয়েক বছর ধরে এই মার্কেট থেকে পোশাক নিয়ে যাচ্ছি। এ বছর পোশাকের দাম একটু বেশি। গত বছর যে পোশাক ১ হাজার টাকায় কিনেছি। এ বছর তা ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে নিতে হচ্ছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ী মশিউর আলম বলেন, গত রমজানে বিক্রির চাপে ইফতার করার সময় পাইনি। এ বছর সেই চাপ নেই। মার্কেটে তেমন ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। আমি এই মার্কেটে ব্যবসা করি ২৫ বছর ধরে। তবে এই বছরের মতো এমন অবস্থা আগে দেখিনি। গতবারের তুলনায় এবার তিন ভাগের এক ভাগও বিক্রি হয়নি। করোনার সময়ও এত খারাপ অবস্থা হয়নি। 

বিদেশি পোশাক বিক্রেতা মো. তুহিন জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধি, এলসি জটিলতার কারণে এবার বিদেশি পোশাকের আমদানি কম। আমার পোশাক আটকে আছে বন্দরে। পোশাক হাতে না পেলে বিক্রি করব কীভাবে।

একাধিক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর অভিযোগ, পোশাক নিয়ে খেয়া পারাপারের সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন ইজারাদাররা। বস্তাপ্রতি জোর করে অতিরিক্ত দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা আদায় করছেন তারা। টাকা দিতে না চাইলে বস্তা ফেলে দেওয়া হয়। ঘাট পার হতে দেয় না। 

তবে ইজারাদারদের দাবি, অতিরিক্ত কোনো টাকা তারা আদায় করছেন না। তালিকা অনুযায়ী বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা নিচ্ছেন। অনেকে আবার টাকা না দিয়ে চলে যান। কেউ কেউ পরিচয় দেন সরকারি চাকরিজীবী, কেউ সাংবাদিক, কেউ ছাত্র।  

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক, হাজী মো. মুসলিম ঢালী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পোশাক নিতে এখানে আসেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর বিদেশি পোশাকের আমদানি কম হওয়ায় দেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। দেশীয় পোশাকের মান উন্নত হওয়ায় বিদেশি পোশাকের কদর কমেছে। শবেবরাতের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও এখন একটু কম। তবে ১৫ রমজানের পর বিক্রি বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। 

সমিতির সভাপতি হাজী মো. স্বাধীন শেখ জানান, পোশাকের দাম বৃদ্ধির কারণে অল্প লাভে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত পোশাক বিদেশেও রপ্তানি হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা