খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১১:৫১ এএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৪ পিএম
রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন এক নারীশ্রমিক। সম্প্রতি দীঘিনালার মগ্যা কারবারিপাড়ায়। প্রবা ফটো
পাহাড়ি অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শুঁটকির কদর রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ের দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা সাপ্তাহিক হাট থেকে বেশি করে শুঁটকি কেনেন। কারণ শুঁটকি বেশিদিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এ ছাড়া জুমচাষিরা বাড়িঘর-হাটবাজার থেকে দূরে বসবাস করায় তাদের কাছে শুঁটকির আলাদা চাহিদা রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে শুঁটকি এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। শুঁটকিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। প্রায়ই এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব দেখে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার তরুণ সজীব চাকমা ভেজালমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে উৎসাহী হন। বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এনে শুরু করেন শুঁটকি উৎপাদন।
এক বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কেজি তাজা ছুরি মাছ এনে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেন উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের মগ্যা কারবারিপাড়ার সজীব চাকমা। এতে তার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। শুঁটকিগুলো সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা ছিল বেশ। বিক্রির পর দেখলেন প্রায় ৬ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সজীব চাকমা জানান, বর্তমানে শুঁটকি তৈরিতে ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে নারীশ্রমিকও রয়েছে। প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়। শ্রমিক খরচ বেশি হয় মাছ পরিষ্কার করা আর শুকাতে। রোদে ঝুলন্ত মাছ সময়মতো উল্টে-পাল্টে শুকিয়ে টাটকা শুঁটকি করাই আসল কাজ। এই শুকানোতেই হয় গুণগত ভালো মানের শুঁটকি। সজীব চাকমার প্রত্যাশা তার মতো এমন আরও উদ্যোক্তা গড়ে উঠুক। আর ভোক্তারা পাক বিষমুক্ত শুঁটকির স্বাদ।
শুঁটকি বাজারজাতকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসা, পরিষ্কার করা এবং শুকানো পর্যন্ত সময় লাগে ১০ দিন। বৃষ্টি-বাদলের ঝামেলা না হলে এক চালান বাজারজাত করতে ১০-১২ দিন সময় লাগে। এরপর পাইকারি ক্রেতারা বাড়ি থেকে শুঁটকি কিনে নিয়ে যায়।’ এ ছাড়া তিনি নিজে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নির্দিষ্ট কিছু পাইকারের কাছে পৌঁছে দেন বলেও জানান।
খামারের শ্রমিকরা জানান, তারা আগে অনেকে বেকার ছিলেন। সজীব চাকমা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। ঘরের কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতে পারছেন।
স্থানীয়রা জানান, সজীব চাকমার উৎপাদিত শুঁটকি খুব সুস্বাদু। তিনি বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করেন। তাই প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গগণ বিকাশ চাকমা জানান, সজীব চাকমা একজন তরুণ উদ্যোক্তা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি নিজেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
দীঘিনালা উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক তৎজিম চাকমা বলেন, ‘সজীব চাকমা সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন করেন। নিরাপদ খাদ্য বলতে যা বুঝায় তিনি তাই উৎপাদন করেন। তার উদ্যোগের সফলতা কামনা করছি। তার সফলতা দেখে অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক উদ্যোগী হবেন বলে প্রত্যাশা।’