× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলদস্যুদের কবলে এমভি আব্দুল্লাহ

সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজ নিরাপদ হবে কীভাবে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৫ এএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১০:০৬ এএম

সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজ নিরাপদ হবে কীভাবে

কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় ছিল সোমালিয়ার জলদস্যুদের উৎপাত। আবার কেন সক্রিয় হয়ে উঠল তার বেশকিছু কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলাকে একটি অন্যতম কারণ মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার সময় হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে। এ কারণে ওই রুট দিয়ে বৈশ্বিক যে ২০ শতাংশ ফ্রেইট চলাচল করত, সেটি ব্লক হয়ে যায়। এতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্যাপ্টেন আনাম বলেন, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পুরোপুরি সেদিকে নজর দিয়েছে। ফলে ভারত মহাসাগর জলদস্যুদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তিনি বলেন, যতক্ষণ না যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে ততক্ষণ সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল নিরাপদ হবে না। যুদ্ধ ঘিরে কিছু পক্ষ ফায়দা নিতে চায়। যদি এমনটি হয় তাহলে সামনে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ঝুঁকি বাড়বে। ফলে ব্যয়ও বাড়বে।

তিনি বলেন, লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা যেমন বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে প্রভাব ফেলেছে, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা বাড়লে ঠিক একই রকম প্রভাব পড়বে। জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে সামগ্রিকভাবে খরচ বেড়ে যাবে। কারণ বাড়তি খরচ জাহাজ মালিক নিজ থেকে দেবে না। সেটা গিয়ে পড়বে ভোক্তার কাঁধে। এতে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

গত ৫ জানুয়ারি লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী এমভি লিলা নরফোক ছিনতাই করার পর সর্বশেষ গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই করে। হুমকিতে পড়ে জাহাজটির ২৩ নাবিকের জীবন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এমভি আব্দুল্লাহ হাইজ্যাক হওয়ার পর সবার মধ্যেই উৎকণ্ঠা কাজ করছে। নৌপথটি এখন আগের চেয়ে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এর আগে হুতিদের হামলার কারণে লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল কমে যায়। লোহিত সাগরের পরিবর্তে দ্য কেপ অব হোপ রুট হয়ে চলাচল করায় জাহাজের ভাড়া ইতোমধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা। এখন সোমালিয়া উপকূলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় ওই রুট দিয়ে জাহাজ চলাচলেও খরচ বাড়বে। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে গেলে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করে যেতে হয়। নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিশ্চিত করতে হলে জাহাজ পরিচালন খরচ বাড়বে। ফলে ভাড়া বেড়ে যাবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সোমালিয়ানরা ইতোমধ্যে যেহেতু কয়েকটি জাহাজ হাইজ্যাক করেছে, তাহলে সামনে যে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে না তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। হুতিদের আক্রমণের পর লোহিত সাগরে যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো নিরাপত্তা জোরদার করেছে, ভারত মহাসাগরেও একই ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।’

ধারণা করা হয়, বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়। এর সঙ্গে প্রায় ৯৩ হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ এবং সাড়ে ১২ লাখ নাবিক জড়িত। জলদস্যুতার ঘটনা বেড়ে গেলে পুরো ক্ষেত্রটি চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করেন নৌবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা। 

বৈশ্বিক জলদস্যুতার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত সময়ে বিশ্বব্যাপী যেসব জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে প্রধান কয়েকটি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা ঘিরে। এর মধ্যে গিনি উপসাগর, এডেন উপসাগর ও পশ্চিম ভারত মহাসাগর এলাকা রয়েছে। এই তিন অঞ্চলে জলদস্যুতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এর মধ্যে ভারত মহাসাগরে দস্যুতার ঘটনাগুলো প্রধানত তানজানিয়া, নাইরোবি ও সোমালিয়ার কাছে ঘটে। দক্ষিণ চীন সাগরে জলদস্যুদের আক্রমণ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের কাছে ঘটে। বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের আক্রমণ বাংলাদেশে বেশি হয়। এর বাইরে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে জলদস্যুতার হার বেশি এবং পুরো সমুদ্রজুড়ে দস্যুতা সংঘটিত হয়। যেমন আরব সাগর, এডেন উপসাগর এবং গিনি উপসাগরজুড়ে জলদস্যুতার ঘটনা ঘটে। 

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে সোমালি জলদস্যুরা সোমালিয়া উপকূলে ২১২টি দস্যুতার ঘটনা ঘটিয়েছিল। ২০১৫-১৬ পর্যন্ত হামলার পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে ২০১৭ সাল থেকে সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা কমে যায়। ২০১৮ সালের পর সোমালিয়ার জলদস্যুদের মাধ্যমে কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ অপহৃত হয়নি। সে কারণে ২০২২ সালের আগস্টে দি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থার একটি গ্রুপ সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা আর বিশ্বব্যাপী শিপিংয়ের জন্য হুমকি নয় বলে ঘোষণা দেয়। ওই সময় ২০২৩ সালের শুরু থেকে ভারত মহাসাগরকে উচ্চ ঝুঁকিপূণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলে জানানো হয়। এর ঠিক এক বছর পার না হতেই এখন আবারও সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা বাড়ল।

নিরাপদ করার উপায়

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) নির্দেশনা অনুযায়ী, জলদস্যুতা প্রতিরোধে জাহাজে উচ্চক্ষমতার জলকামান রাখার কথা বলা হয়েছে। জলকামান দিয়ে সহজেই দস্যুদের স্পিডবোট ডুবিয়ে দেওয়া যায়। তাছাড়া সাউন্ড গান ও লেজার গান রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জাহাজের চারপাশে তারকাঁটার বেড়া স্থাপন করা যায়, বোট ট্র্যাপ বা জালের ফাঁদ রাখা যায় (জাল ছুড়ে দুস্যদের বোট আটকে ফেলার জন্য)। লুব্রিক্যান্ট ফোম আরেকটি অস্ত্র, যা দিয়ে দুস্যদের হটিয়ে দেওয়া যায়। এসবের পাশাপাশি আর্মস গার্ড নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমবি।

আর্মস গার্ড হলো সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী। যেহেতু জাহাজ বিভিন্ন দেশে যায়, বাণিজ্যিক জাহাজে অস্ত্র রাখা যায় না। তাই বিপজ্জনক এলাকায় জাহাজকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বেশকিছু নিরাপত্তা কোম্পানি গড়ে উঠেছে। তারা প্রমোদতরী ও বাণিজ্যিক জাহাজসহ বিভিন্ন নৌযানে নিরাপত্তা দেয়। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এই সেবা দেওয়ার জন্য তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জাহাজে অবস্থান করে। এরাই আর্মস গার্ড বলে পরিচিত।

অনেক সময় এসব প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে দস্যুরা জাহাজে উঠতে ব্যর্থ হয়। এরপরও যদি তারা জাহাজে উঠে পড়ে, তখন দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। জাহাজে একটি সুরক্ষিত এলাকা (সিটাডেল) রাখা হয়, যা পুরু ইস্পাতের পাত দিয়ে তৈরি। সাধারণত ইঞ্জিনরুম ও তার পেছনের স্টিয়ারিং রুমকে বানানো হয় সিটাডেল। এ এলাকায় বাইরে থেকে ঢোকা প্রায় অসম্ভব। সিটাডেলের ভেতরে কয়েকদিনের খাবার ও পানি রাখা হয়। এর সঙ্গে থাকে একটি ভিএইচএফ রেডিও ও একটি স্যাটেলাইট ফোন, যা দিয়ে ক্যাপ্টেন সাহায্য চাইতে পারেন। সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ যুদ্ধজাহাজ পৌঁছে যেতে পারে। তখন দস্যুরা পালাতে বা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

নৌবাণিজ্য দপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই ঝুঁকি এড়ানো যাবে না। ঝুঁকি নিয়েই জাহাজগুলোকে চলতে হবে। ঝুঁকি থাকায় জাহাজের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। ইন্স্যুরেন্স বাড়বে, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম বেড়ে যাবে।’ তবু তিনি আইএমবি নির্দেশনা অনুযায়ী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা