রাজশাহী
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪১ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৮ পিএম
রাজশাহী নগরীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক যেন মশার আস্তানা। প্রবা ফটো
রাজশাহী নগরীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা খানম চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। তার এখন পড়ার প্রচুর চাপ। কিন্তু টেবিলে যখনই পড়তে বসে, মশার কামড়ে তার পড়ায় মন বসে না। বাধ্য হয়ে দিনের বেলায়ও মশারির মধ্যে বসে পড়তে হয় তাকে। তাহমিনা বলেন, ‘সব সময় বিছানায় বসে পড়তে ভালো লাগে না। আবার কয়েল জ্বালিয়ে পড়লেও দম বন্ধ হয়ে আসে। তা ছাড়া কয়েলেও আজকাল কাজ হয় না। মশারাও চালাক হয়ে গেছে। এ কারণেই হয়তো সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম কাজে আসছে না।’
তাহমিনার মতো রাজশাহী নগরীসহ নয়টি উপজেলা শহরেও একই অবস্থা মোকাবিলা করছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। অন্যদেরও একই অবস্থা বলাই বাহুল্য। রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও জেলার পৌরসভাগুলোয় মশক নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেও পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই। এদিকে কয়েকদিন ধরে রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বাড়ির ছাদ ও ফাঁকা জায়গাগুলোয় পানি জমতে শুরু করেছে। বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণের ঝুঁকি।
পদ্মা আবাসিক এলাকার রাস্তার ধারে চায়ের দোকান চালান মো. রুনু। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে শীতে এক প্যাকেটও মশার কয়েল বিক্রি হতো না। এখন সেখানে দিনে দুই থেকে আড়াই প্যাকেট কয়েল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দোকানে সব সময় কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে কাস্টমার মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে চলে যায়।’
তানোর উপজেলা শহরে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ৩টার সময় ব্যবসায়ীরা দোকানে মশা মারার কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছেন। দুর্গাপুর উপজেলার ব্যবসায়ী মো. রাসেক বলেন, ‘মশার জ্বালা নমরুদের কাহিনি স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু পৌরসভা থেকে মশা মারতে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।’ জেলার অন্যান্য উপজেলা শহর ও পৌরশহরে গিয়েও এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, পরিচ্ছন্নতা শাখায় কাজ করেন ৫০০ জন কর্মী। মশক শাখায় রয়েছেন ৮০ জন। তারা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে নিয়মিত ড্রেন ও বিভিন্ন এলাকায় ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে আসছেন। মশক ও লার্ভা নিধনে ১৫ দিনের একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছিল সিটি কর্তৃপক্ষ। কীটনাশক, জ্বালানি ও লেবার বাবদ ব্যয় করেছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা। এভাবে সারা বছর বদ্ধ জলাশয়ে লার্ভা নিধন ও ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের নানা কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তাতে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু মশা কমছে না।
সিটির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, ‘এ বিষয়ে জনসচেতনা সৃষ্টি করা না গেলে মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। কারণ বাড়িঘর ও ফাঁকা জায়গাগুলো যদি মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখে তাহলে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা সারা বছর কাজ করেও মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না।’ তবে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটির মশা অন্যান্য এলাকার চাইতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। কেবল মার্চ থেকে মশার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেড়েছে।’