কাওছার আহমদ, সিলেট
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১২:০৪ পিএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১২:০৭ পিএম
হাজার দেড়েক মানুষ প্রতিদিন বিকালে ইফতার করতে জড়ো হন সিলেট নগরীর রিকাবী বাজারের জেলা স্টেডিয়ামে। প্রবা ফটো
প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ প্রতিদিন বিকালে জড়ো হন সিলেট নগরীর রিকাবী বাজারের জেলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে। মাগরিবের আজান তথা ইফতারের প্রায় আধা ঘণ্টা আগে স্টেডিয়ামের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে প্রবেশ করেন সবাই সারিবদ্ধভাবে। তারা কেউ দর্শক নন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো প্রতিদিন এখানে জড়ো হন ইফতার করতে। প্রথম রমজান থেকে এভাবেই প্রতিদিন তারা এখানে এসে ইফতার করেন।
তারা সবাই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। আছে পথশিশু, প্রতিবন্ধী, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া, ভবঘুরে; এই মানুষগুলোই সিলেট স্টেডিয়ামে আসেন ইফতার করতে। গত বছরের রমজান মাস থেকে এই গণইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এমন মহতী কাজের আয়োজক হিসেবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নাম দেওয়া হলেও সম্পূর্ণ নিজের অর্থ ও উদ্যোগে কাজটি করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম। এমনটাই জানান ইফতার আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন আসরের পর থেকে রোজাদাররা এখানে জড়ো হতে থাকেন। ইফতারের কিছু সময় আগে জিমনেসিয়াম ভরে যায়। এত মানুষ, কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, কোলাহল নেই। অদ্ভুত এক নীরবতায় সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো ইফতারি সামনে রেখে প্রভুর আদেশের অপেক্ষায় বসে থাকে।
আয়োজকরা জানান, এখানে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, সেগুলো সাধারণ কিংবা নামমাত্র খাবারও নয়। প্রতিদিন আলাদা বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা আখনি (সিলেট অঞ্চলের বিশেষ বিরিয়ানি) তাদের মধ্যে পরিবেশন করা হয়। সেই আখনি কখনও চিনিগুঁড়া, কখনও কাটারীভোগ চাল দিয়ে তৈরি হয়। খাবারের তালিকায় একদিন মুরগি হলে আরেক দিন গরু কিংবা খাসির গোশত থাকছে নিয়মিত। আখনি ছাড়াও খেজুর, পেঁয়াজু, জিলাপি, ছোলা, সালাদ তো আছেই। তৃষ্ণা মেটাতে পানির সঙ্গে থাকে সুস্বাদু শরবত।
সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এই আয়োজন হলেও প্রতিদিন সুশীল সমাজের অনেক মানুষও ইফতার করেন এখানে। রোজার শুরু থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, এসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনুসহ অনেকেই সেখানে ইফতার করেছেন।
রোজার শুরু থেকেই এখানে ইফতার করছেন আব্দুল করিম নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো এমনও মানুষ আছে যারা শুধু মুড়ি কিংবা পানি দিয়ে ইফতার করেন। সেই মানুষগুলোর ভাগ্যে এত ভালো খাবার জোটে না সবসময়। এমন ভালো খাবার পাওয়ায় সবাই খুশি।’
চোখে মুখে একধরনের প্রশান্তি নিয়ে ভ্যানচালক শফিক মিয়া বলেন, ‘এখানে যা দিয়ে ইফতার করছি সেগুলোর ঘ্রাণই অন্যরকম। শুধু পেটই ভরে না, মনও ভরে যায়। এগুলো বড়লোকের খাবার। আয়োজকের জন্য অন্তর থেকে দোয়া চলে আসে।’
একইভাবে প্রশান্তির কথা জানান ঠেলাগাড়িচালক সবুর আলী, রিকশাচালক আব্দুল হক, দিনমজুর দুদু মিয়াসহ অনেকে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের সঙ্গে ইফতার আয়োজন নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিবারের চল্লিশজনের মতো সদস্য ইফতারে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। একেক দিন একেক রকম আইটেম থাকে। পর্যায়ক্রমে মোরগ, গরু ও খাসির মাংস দিয়ে আখনি রান্না করা হয়। আজ গরুর মাংসের আখনি হলে, পরদিন থাকে খাসির ব্যবস্থা। শেষ রমজান পর্যন্ত এই ইফতার অব্যাহত থাকবে। আরব দেশগুলোয় এমন ইফতার সংস্কৃতি রয়েছে। এগুলো দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে নিজের দেশে করার। সেই ইচ্ছে থেকে গত বছর শুরু করি এই আয়োজন।