আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ২১:২০ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ২৩:২৮ পিএম
আটকের পর র্যাব হেফাজতে আসামি শহিদুল ইসলাম। প্রবা ফটো
ঢাকার আশুলিয়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে অচেতন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন শহিদুল ইসলাম মীর। হাসপাতালে নেওয়ার পর স্ত্রী শিমু আক্তার ফারজানাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর থেকেই পালানোর সুযোগ খুঁজছিলেন শহিদুল। তবে অ্যাম্বুলেন্সের চালক ঘটনাটি বুঝতে পেরে কৌশলে পুনরায় তাদের নিয়ে আশুলিয়ার পথে রওনা দেন। পথে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে (স্বামী) র্যাবের হাতে ধরিয়ে দেন চালক।
অভিযুক্ত ৩৬ বছরের শহিদুল ইসলাম মীর আশুলিয়ার শিমুলতলা দরগারপাড় এলাকার মৃত নজরুল ইসলাম মীরের ছেলে। তার স্ত্রী (নিহত) শিমু আক্তার ফারজানা জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার উত্তর কালামপুর গ্রামের মরহুম জহুরুল হকের মেয়ে।
বুধবার (২০ মার্চ) বিকালে সাভারে র্যাব-৪, সিপিসি-২-এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি জানান, ১৫ বছর আগে শহিদুলের সঙ্গে ফারজানার বিয়ে হয়। স্ত্রীকে নিয়ে গাজীরচট এলাকার আব্দুল হকের মালিকানাধীন বাড়িতে ভাড়া থাকেন শহিদুল। তাদের আট বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। শহিদুল একজন নেশাগ্রস্ত। এ ছাড়া বিয়ের পর থেকেই নানা সময় ফারাজানার কাছে যৌতুকের জন্য মোটা অংকের টাকা চেয়ে আসছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় পরিবার থেকে টাকা এনে স্বামীকে দিয়েছেনও ফারাজানা। তবে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত।
এমন কলহের মধ্যে একপর্যায়ে বছর পাঁচেক আগে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। পরে উভয় পরিবারের সিদ্ধান্তে শহিদুল পুনরায় শিমুকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে ফের শুরু হয় টাকার জন্য শহিদুলের চাপ সৃষ্টি। যোগ হয় মারধরও।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে টাকা চাওয়া নিয়ে এ দম্পতির মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শহিদুল ফারাজানাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। পরে আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে যান আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার নোভা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ওই নারীকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রেফার করেন।
পরে ওই হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে যান শহিদুল। সেখানে চিকিৎসক ফারজানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন তারা। আশুলিয়ায় পৌঁছলে র্যাব ও আশুলিয়া থানা পুলিশের টিম শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শহিদুল স্ত্রী ফারজানাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় পরে ফারাজানার পরিবার আশুলিয়া থানায় মামলা করে। শহিদুলকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক মেহেদী হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাকে হাসপাতাল থেকে রোগী দিয়েছিল। আমি সেই রোগী নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই। পরে সেখানকার ডাক্তারদের কাছ থেকে জানতে পারি, রোগীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পরে বুঝতে পারি, স্বামীই তাকে মারধর করেছে। পরে কৌশলে তাকে আটকে ফেলি। সে আমার হাত-পা ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু আমি তাকে আবার গাড়িতে তুলে আশুলিয়ায় নিয়ে এসে র্যাব-পুলিশকে খবর দিই।’
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। আগামীকাল আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে।’