তনু হত্যার ৮ বছর
তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:৩৫ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৭ এএম
সোহাগী জাহান তনু । ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের আট বছর পার হচ্ছে আজ। এই আট বছরেও তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে গত তিন বছর তনুর পরিবারের খবর নেয়নি কেউ। এ অবস্থায় বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তনুর বাবা-মা।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পিবিআই ঢাকায় বসে বসে বক্তৃতা দেয়। আমাদের ডেকে পাঠিয়ে উল্টো হয়রানি করে। আমরা গরিব। তাই বলে আমরা কারও গোলাম না যে মেয়ে হত্যার বিচার পাব না। তাকে অনেক কষ্ট করে লালন করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কলিজার টুকরাটারে ছাড়া আবারও ঈদ করব। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি দুনিয়ায় না হয়, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, তনুর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুই মসজিদে দোয়া ও এতিম শিশুদের ইফতারের আয়োজন করছি। বিচার না-পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আর বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।’
তনুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর ফেরেননি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা-পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির কুমিল্লা শাখা।
তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই ঢাকার একটি টিম দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ঘুরে যায়।
২০২৩ সালের ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তনুর বাবা-মা ও ভাইসহ লাইজু জাহান কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে হাজির হওয়ার পর তাদের জানানো হয়Ñ তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ, তাই সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। মামলায় সাক্ষ্য দিতে লাইজু সিলেটের স্বামীর বাড়ি থেকে একদিন আগে কুমিল্লায় যান। পূর্বনির্ধারিত সময়ে লাইজু, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তনুর ছোট ভাই রুবেল হোসেন কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় পিবিআই অফিসে যান। কিন্তু সাক্ষ্য নেওয়া হয় না।
এরপর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে মামলার কার্যক্রম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হক বলেন, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও আত্মীয়স্বজন, এমনকি শিক্ষকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন, আর কী বাকি রইল?