আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৬ পিএম
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়া। প্রবা ফটো
অবশেষে বদলি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়া। গত ১২ মার্চ দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় ‘ঘুষ না দিলেই বৈধ যাত্রী হয়ে যায় অবৈধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ব্যবস্থা নিয়েছে কতৃপক্ষ।
হাসান আহমেদ ভুঁইয়ার বদলির বিষয়টি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই হাসান আহমেদ ভুঁইয়াকে বদলি করা হয়েছে।
যাত্রীরা জানায়, পাসপোর্ট ভিসা বৈধ। কিন্তু ইমিগ্রেশনে গেলেই অবৈধ হয়ে যায়। আবার টেবিলমানি (ঘুষ) দিলেই সবকিছু বৈধ হয়ে যায়। এরকম রীতিনীতি চালু রয়েছে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ইমিগ্রেশনে। এ পথে যাতায়াত করার সময় পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঘুষ নেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার যাত্রী এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ পারাপার হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও যাতায়াতে সময় ও খরচসাশ্রয়ী বিধায় দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করেন। যাত্রী পারাপার বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। তবে বেড়েছে যাত্রী হয়রানি।
অনুসন্ধান ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতগামী যাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক প্রকার নিয়ম করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্টে প্রাইভেট সার্ভিস লেখা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, নবায়ন জাল বলে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, নামের বানানে ভুল হলে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা, কোনো নারী যাত্রী একা ভারতে গেলে তার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা, পাসপোর্টে ভারতসহ অন্য দেশের ভিসা থাকলে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, জন্মতারিখের সঙ্গে আইডি কার্ডের মিল না থাকলে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়া এই পদ্ধতি চালু করেছেন বলে অভিযোগ। তার এ ঘুষবাণিজ্যে সহযোগী পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর। কনস্টেবল জাহাঙ্গীরের মাধ্যমেই ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন ওসি হাসান আহমেদ ভুঁইয়া।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মহিউদ্দিন সম্রাট নামের এক যাত্রীকে বহির্গমন ডেস্ক থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ওই যাত্রীকে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে ডেস্কে থাকা পুলিশ সদস্য জানান, দেশের বাইরে যেতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ কম হলেও তিন মাস থাকতে হবে। আর ওই যাত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে দেড় মাস। এ কারণে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কিছু সময় পর দেখা যায় ওই যাত্রী ভারতে গমন করছেন। ওই যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ইমিগ্রেশন ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভুঁইয়াকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বহির্গমন ডেস্কের কাজ শেষ করে ভারতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আহমেদ ভুঁইয়ার মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।